সিলেটপোস্ট ডেস্ক::‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে এগিয়ে নিতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে সবাই মিলে এক যোগে কাজ করতে হবে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর শিল্পদূষণের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি থেকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোর ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে।’
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরশহরের বাসিয়া সেতুতে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ ও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবীতে বৈশ্বিক কর্মসূফরি অংশ হিসেবে সিলেটের বিশ্বনাথে রিকশা র্যালিপূর্ব বক্তব্যে বক্তারা একথা বলেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, ব্রতি, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই কর্মসূচিতে শতাধিক রিকশার অংশ গ্রহণে র্যালিটি বাসিয়া সেতু থেকে শুরু হয়ে পৌরশহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাপা সিলেটের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. নাজিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের সংগঠক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক ছামির মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক ফজল খান। এসময় পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরী বলেন, পৃথিবীকে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বাঁচাতে হলে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এই ন্যায্য আন্দোলনে সবাইকে শরীক হতে হবে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এব্যাপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া উচিত। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর শিল্পদূষণের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতি থেকে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাঁচাতে উন্নত দেশগুলোর ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুল বক্তব্য তুলে ধরেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের সংগঠক সাংবাদিক ছামির মাহমুদ। এতে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের আগামী ১৮ থেকে ২৬ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন ও ২০ তারিখ ইউএনএসডিজি ক্লাইমেট অ্যাম্বিশন সামিট অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিত্বের ফলে যে কোনো আন্তরাষ্ট্রীয় বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন অন্যতম বৈশ্বিক প্লাটফর্ম।
এতে আরও বলা হয়, গত বছর জাতিসংঘ মহাসচিবের ঘোষিত ইউএনএসডিজি ক্লাইমেট অ্যাম্বিশন সামিট’ ২৩ জলবায়ু নীতি নির্ধারণে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আসতে পারে। তবে, এ সকল সামিটে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর অবস্থান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও জলবায়ু পরিবর্তেনে ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহের দাবি সত্ত্বেও ২০২৩ সালের কপ-২৭ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর জ্বালানি ব্যবস্থা হতে বেরিয়ে আসতে একমত হতে ব্যর্থ হন। পূর্বে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে চাইলেও অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় বহু দেশের বিরোধিতায় সে সকল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর বিরোধীতার ফলে এসসকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংস্থাগুলো কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারে নি। উপরন্তু, গ্লোবাল নর্থের দেশগুলো ক্রমাগতভাবে তাদের জ্বালানি উৎপাদনে অনবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানসহ অধিক হারে ভর্তুকি বৃদ্ধি করতে দ্বিধা করছে না। জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো শুধুমাত্র ২০২২ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে ১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে যা কভিড পূর্ববর্তী সময়ের থেকে প্রায় দ্বিগুণ। ধনী দেশসমূহের আরেক সংগঠন জি-২০ জোটভুক্ত দেশগুলোও একই রকমভাবে জ্বালানি পরিকল্পনা নিচ্ছে যা জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে বিপত্তি ঘটাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ি দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন গ্যাসক্ষেত্র তৈরীর ঘোষণা, এশিয়ার এলএনজি বাজারে আধিপত্য জোরদারে জাপানের আগ্রাসী কার্যক্রম, চীন ও কোরিয়া কর্তৃক নৌবহরের সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসাবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার কয়লা ভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা এসকল কিছুই জলাবায়ু পরিবর্তনরোধে তাদের চরম উদাসিনতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সম্মেলনে বৃহৎ শক্তির দেশগুলো বাগাড়ম্বরপূর্ন বক্তৃতা দিলেও আদতে তারা জলবায়ু পরিবর্তনকে নিজেদের নেতৃত্ব তুলে ধরার নতুন ক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুগুলোর মতো বিবেচনায় নিয়ে এর ক্ষতিকর প্রভাব হতে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করা ও এর মোকাবেলায় গঠিত বিভিন্ন বৈশ্বিক ফোরাম ও সম্মেলনে জলবায়ু কূটনীতিতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করাই যেন বিশ্বের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশগুলোর প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে, আসন্ন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন ও ইউএনএসডিজি ক্লাইমেট অ্যাম্বিশন সামিটে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণে করতে গণমাধ্যম, বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের ব্যাপারে অবগত করা, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার রোধের ব্যাপারে জোরালো আহ্বান, দাবির বিষয়টিকে বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেয়া এবং জীবাশ্ম জ্বালানি বিরোধী জলবায়ু ন্যায্যতার দাবীতে জনমত তৈরির উদ্যেশ্যে বিশ্বব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসাবে আমাদের এ আয়োজন।
#