১ কোটি দাবীর মধ্যে ২৫ লাখে মুক্তি পেলেন মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ

সিলেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণএ ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় একটি চক্র জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। এদের কয়েকজন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা। অপহরণকারীদের শর্ত অনুযায়ী যার হাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা তুলে দেওয়ার পর মিসবাহ সিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয় তিনি বিএনপির ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত ১২টার দিকে মিসবাহ সিরাজ সিএনজি অটোরিকশাযোগে নগরীর সুবিদবাজারের মিয়া ফাজিল চিশত এলাকায় একটি বাসায় যাচ্ছিলেন। সাথে ছিলেন মিজান নামের এক রঙমিস্ত্রী। পথিমধ্যে ওই এলাকার মাসালাবাজার নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে পৌঁছামাত্র কয়েকটি মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা তার অটোরিকশার গতিরোধ করে। অস্ত্রেরমুখে তাকে অন্য একটি অটোরিকশায় তোলার চেষ্টা করে। তিনি ওই অটোরিকশাতে উঠতে রাজি না হওয়ায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত ও পায়ে কোপ দেয়া হয়। হাতে মারাত্মক জখম না হলেও পায়ের রগ কেটে যায়। এমতাবস্থায় তাকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর ঘন্টা খানেক পরে অপহরণকারীরা মিসবাহ সিরাজের মোবাইল ফোন থেকে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের মোবাইল ফোন তাকে অপহরণ করার বিষয়টি জানায়। মুক্তিপণ চাওয়া হয় ১ কোটি টাকা। এ নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে দফায় দফায় কথা হয়। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চলে দর কষাকষি। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণে ২৫ লাখ টাকা চূড়ান্ত হয়। ওই টাকা ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি লল্লিক আহমদের হাতে দেওয়ারও শর্ত দেয় অপহরণকারী। অপহরণকারীদের শর্ত অনুযায়ী রাতেই লল্লিক আহমদকে ডেকে আনা হয় এবং তিনিও কথা বলেন তাদের সাথে।
একপর্যায়ে লল্লিক আহমদের হাতে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার পর অপহরণকারীদের তথ্য অনুযায়ী রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাগরদিঘীরপাড় এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় মিসবাহ সিরাজকে। তাকে উদ্ধার করেন তার মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ ও একজন নিকটআত্নীয়। সেখান থেকে একটি প্রাইভেট গাড়িতে করে মিসবাহ সিরাজকে তার বাসার সামনে আনা হয়।পরে রাগীব বাবেয়া হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে নগরীর সোবহানীঘাটস্থ আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনেরা। ভোররাত ৪টার দিকে তাকে ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় দেড় ঘন্টার মতো তার শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের আগেও পরে তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান এবং এভারগ্রীনের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকেই তিনি লাপাত্তা। যদিও মিসবাহ সিরাজের মেয়ে মুনতাহা আহমদ মিসবাহ জানিয়েছেন, তার বাবার শারীরিক অবস্থা ভালো হয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।
মুক্তিপণ প্রসঙ্গে বলেছেন, আতঙ্কে আছেন, এখন এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। সময় হলেই সব জানানো হবে।
মিসবাহ সিরাজের ঘনিষ্টজরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দিনেই তাকে নিয়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাটি জানার পর পুলিশ ও গোয়েন্দারা তদন্তে নেমেছে। তাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ নিয়ে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। ছায়া তদন্তে ইতোমধ্যে অনেক তথ্যই মিলছে। কারা এর সাথে জড়িত তা খোঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনিআল হারামাইন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিন্তু ঘটনার ভিকটিম কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের কারোই খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পরও পুলিশ এলাকার সিসিটিভি’র ফুটেজ সংগ্রহসহ তদন্তকাজ এগিয়ে রাখছে।
এদিকে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেওয়ার ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী লিখেন- ‘আওয়ামী লীগের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে হত্যার উদ্দেশ্যে ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সিলেটের ইতিহাসে এই ঘটনা এক কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। পুণ্যভূমি সিলেটে কোনো রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতার ওপর কোনো কালেই এমন ঘৃণ্য কাপুরুষোচিত হামলার ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার ইনশাআল্লাহ এই সিলেটের মাটিতে সিলেটের মানুষকে সঙ্গে নিয়েই করা হবে।’
তিনি আরও লিখেন, ‘মিসবাহ ভাইকে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত ১২টায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে অপহরণ করে নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও ছুরিকাঘাত করে পায়ের রগ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখে সন্ত্রাসীরা। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রঞ্জিত সরকার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন- ‘সিলেট নগরীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপানো হয়েছে। তার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দল। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। অনেকে বিদেশ পাড়ি জমান। ওই সময় থেকে আত্মগোপনে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন থানায় ৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।