রিজেন্ট পার্ক রিসোর্ট থেকে ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করে বিয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী

সিলেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৬:১৭ অপরাহ্ণসিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় একটি পার্ক ও রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। এ সময় রিসোর্টে অবস্থান করা ১৬ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। পরে তাঁদের মধ্যে চারজনকে অভিভাবক ডেকে বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদের অভিভাবকদের জিম্মায় সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করার মুচলেকা নেওয়া হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে এ ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করে মোগলাবাজার থানা-পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্কে দীর্ঘদিন ধরে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে উচ্ছৃঙ্খল তরুণ-তরুণীরা পার্ক ও রিসোর্টের কক্ষে অবস্থান করে সময় কাটান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আজ দুপুরের দিকে পার্কে প্রবেশ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। এ সময় পার্কের বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। একপর্যায়ে রিসোর্টের একটি অংশে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন রিসোর্টে থাকা ১৬ জন তরুণ-তরুণীকে আটক করা হয়।
মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পার্কে আগুন লাগা ও ঝামেলার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। স্থানীয় লোকজন অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দায়ে কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটক করার কথা জানিয়েছে। সম্মানহানির ভয়ে তাঁদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন না বলে জানিয়েছেন। অভিভাবক ডেকে বিষয়টি সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে বিক্ষুব্ধ কয়েক শ লোক ছিলেন। তাঁদের শান্ত করার কাজ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ কোনো অভিযোগ করেনি।
দক্ষিণ সুরমা ফায়ার সার্ভিসের সদস্য তুহিন আহমদ জানান, আজ বেলা ১টা ৩১ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সিলাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. আবদুর রহমান বলেন, তিনি এলাকার বাইরে থাকায় বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় লোকজন পার্কে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে কাজি ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এ সময় দুই পরিবারের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন। আটক বাকি তরুণ-তরুণীদের স্থানীয় মুরব্বিদের মাধ্যমে তাঁদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পরবর্তী সময়ে সামাজিকভাবে বিয়ের আয়োজন করার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রিসোর্টের মালিকপক্ষ এলাকায় এসেছে। তাঁরা স্থানীয় মুরব্বিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। বিষয়টি নিয়ে পার্কের মালিকপক্ষের সঙ্গে আলাপ চলছে।
জানতে চাইলে রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টের ব্যবস্থাপক হুমায়ুন আহমদ বলেন, ঘটনার সময় তিনি রিসোর্টের বাইরে ছিলেন। খবর পেয়ে মালিকপক্ষ ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘সব রকমের নিয়ম মেনেই রিসোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছিল। অতিথিদের ভোটার আইডি কার্ডসহ সব ধরনের কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়।’ অভিযোগের বিষয়ে বলেন, রিসোর্টের মালিক স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করছেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি দেখবেন।