পূর্ব বিরোধের জেরে উত্তেজনা খাদিমপুরে

ওসমানীনগর প্রতিনিধি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৫, ৫:২৮ অপরাহ্ণসিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর গ্রামে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধসহ গ্রামের প্রবিণদের নিয়ে কটাক্য করায় দুই পক্ষের মধ্যে টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় উত্তেজিত গ্রামবাসী বৃহস্পতিবার মাইকে ঘোষনা দিয়ে ওই বাড়িতে হামলা চালিয়ে ১০ বহিরাগতকে আটক করেন। এই ঘটনায় দিনভর খাদিপুর গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এসময় গ্রামবাসীর হাতে আটক ১০ বহিরাগত ছাড়াও খাদিমপুর গ্রামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ ৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
এই ঘটনায় শুক্রবার ওসমানীনগর থানায় ২১জনের নাম উল্যেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খাদিমপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাম রব্বানী সুহেলের সাথে গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সাথে জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। এর জের ধরে গ্রামবাসী ও গ্রামের প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে গ্রামের একাধিক ব্যাক্তিকে নিয়ে নানা মন্তব্য করেন গোলাম রব্বানী সুহেল ও তার ভাই রুবেল। মন্তব্য ডিলেইট করতে গোলাম রব্বানি সুহেলের বাড়িতে যান গ্রামের একাধিক প্রবিণ ব্যাক্তি। মন্তব্য ডিলেইট না দেয়ায় বৃহস্পতিবার পুনরায় সেই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল কয়েক জনের। কিন্তু ওইদিন সকাল থেকেই বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে সুহেলের ড্রাইভার রাসেলের মাধ্যমে সিলেট শহর থেকে ১০ জন বহিরাগত নিয়ে আসেন ওই বাড়িতে। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই বাড়ির প্রধান ফটকসহ বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে ১০জন বহিরাগতকে আটক করেন গ্রামবাসী। গ্রামবাসীর উপর হামলা চালাতে আরো বহিরাগত অস্ত্রসহ ওই বাড়িতে অবস্থান করছেন ভেবে মসজিদের মাইকে ঘোষনা দিয়ে বাড়িটি ঘিরে রাখে গ্রামবাসী।
খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারায় অতিরিক্তি পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল আশরাফুজ্জামান ও সেনাবাহীনির একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌছে ওই বাড়িতে যান। তখন সাংবাদিকদের ওই বাড়িতে প্রবেশেও বাধাদেন থানার ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুহেলের বাড়ি থেকে আর কোন ব্যক্তিকে আটক করা হয়নি। পরে বহিরাগত ১০জন এবং ঘটনাস্থল থেকে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জিতু মিয়া, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আখলাক মিয়াসহ শানুর মিয়া ও জিতু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে গোলাম রব্বানী সুহেলের ভাই গোলাম কিররিয়া জুয়েল এর স্ত্রী ডলি বেগম বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৪।
এলাকাবাসির অভিযোগ, ওই বাড়িতে বিপুল পরিমান অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কোন অস্ত্র উদ্ধার কিংবা কাউকে আটক না করলেও গ্রামের ৪ ব্যক্তিকে আটক করায় এলাকায় টান-টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ওসমানীনগর উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আহবাবুল হোসেন আহবাব বলেন, হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে গোলাম রব্বানি সুহেল ও তার ভাই রুবেল গ্রামের প্রবিণদের কটাক্য করে বার্তা প্রেরণ করে। গ্রামবাসী বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রামবাসীদের উপর হামলা করতে প্রায় শতাধিক বহিরাগত বাড়িতে আনেন গোলাম রব্বানি সুহেল। এই ঘটনা জেনে গ্রামবাসী বাড়িটি অবরুদ্ধ করে রাখে এবং ১০ বহিরাগতকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্ত পুলিশ নিরপরাধ গ্রামের ৪জনকে আটক করে নিয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী গোলাম রব্বানী সুহেল বলেন, খাদিমপুর ভিলেজ নামে গ্রামের ও প্রবাসীদের নিয়ে একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে রয়েছে। গ্রামের প্রবিণ ৩/৪জন ব্যক্তির জোয়া খেলার ভিডিও প্রবাস থেকে এক ব্যক্তি শেয়ার করলে ভিডিওর নিচে আমি সচেতনাতা মূলক মন্তব্য করি। সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী মিলিত হয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লোটপাট করে। তবে, বাড়িতে বহিরাগত লোকজন আনার বিষয়টি তিনি অস্বিকার করেন।
ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য (ওসি) মো. মোনায়েম মিয়া বলেন, খাদিমপুরে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।