বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেটপোস্ট : সিলেট জেলা পরিষদ প্রশাসকের মৃত্যুতে শূণ্য হওয়া পদ পেতে দৌড়ঝাপ শুরু হয়েছে। দেশের অন্যতম বিভাগীয় শহর সিলেটের সম্মানিত এ চেয়ারে প্রথম প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুজ জহির চৌধুরী সুফিয়ান। গত ৯ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে প্রশাসকের পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ পেতে আগ্রহী সিলেটের নেতারা লবিং শুরু করেছেন। আর এ লবিংয়ে যারা আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আওয়ামী কর্মজীবি লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি এএফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু। বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ট কর্মী দাবি করে ৩ জনই এ পদে আসীন হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন।
সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ পাওয়ার দৌঁড়ে থাকা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রীর নির্দেশে সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) আসনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রিয় প্রভাবশালী নেতা ইলিয়াস আলীকে হারিয়ে নির্বাচিত হন শফিক। বর্তমানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী এ পদে আসীন হতে পারেন বলে তার সমর্থকদের বিশ্বাস।
এদিকে সিলেট জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ একজন মুক্তিযোদ্ধা। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে সিলেট-৫ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। তার আসন থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন।
এছাড়া জেলা পরিষদ প্রশাসকের দৌড়ে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সিলেট জেলা বারে সাবেক সভাপতি ও একাধিকবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এএফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টুর ছাত্রলীগের সাথে পথচলা শুরু স্কুল জীবনে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে রাজপথের সকল আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলেও ‘বঞ্চিত’ থাকতে হয়েছে তাকে সব সময়। দীর্ঘ ৩৩ বছর বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধরে রাখা মিন্টু আওয়ামী কর্মজীবি লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সম্প্রতি মাত্র ১৫ দিনের লন্ডন সফরে সেখানে আওয়ামী কর্মজীবি লীগের কমিটি গঠন শেষে কার্যক্রম শুরু করেছেন। তিনি ২২০১ সালে সিলেট জেলা বারের নির্বাচনে যুগ্ম সম্পাদক পদে বিজয়ী হন। পরবর্তীতে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে পর পর দু’বার সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৪ সালে জেলা বারের সভাপতি হিসেবে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হচ্ছে প্রায় ৫০ বছরের। ছাত্রলীগ দিয়ে শুরু করে বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। কোনো কিছুর আশা না করেই কাজ করে যাচ্ছি। যদি আমাকে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নেত্রী যোগ্য মনে করেন, তবে আমি অবশ্যই সাগ্রহে তা পালন করতে প্রস্তুত।
জেলা পরিষদের প্রশাসকের ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ সম্পূর্ণ সরকারের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে বিশ্বস্ত, যোগ্য ও অভিজ্ঞ মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন। এক্ষেত্রে আমাকে যদি দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে আমি অবশ্যই সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা নিয়ে বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার চেষ্টা করবো।
আওয়ামী কর্মজীবি লীগের কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এএফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী মিন্টু বলেন, কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা নিয়ে বঙ্গবন্ধু কিংবা দেশরত্ম শেখ হাসিনার আদর্শ লালন করি না। দীর্ঘ ৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বার বার বঞ্চিত থাকলেও আমার কোনো ক্ষোভ নেই। নেত্রী যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, তার বিশ্বাসের ভার আমার কাধে অর্পন করেন, তা আমি অবশ্যই সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে পালন করবো। অতীতেও কোনো দিনই কোনো দূর্ণীতি অনিয়ম আমার কাছ ঘেষতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না।