গুম হওয়া ১৯ জনের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠল পরিবেশ

সিলেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫, ৫:৫০ অপরাহ্ণসিলেটপোস্ট রিপোর্ট :প্রধানমন্ত্রী তো আমাদের কান্না শুনবেন না। আমরা আমাদের ভাইকে আর ফিরত চাই না। অনুরোধ করব, আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলুন। আর কাঁদতে চাই না। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গুম হওয়া সেলিম রেজা পিন্টুর বোন মুন্নী নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন। এসময় গুম হওয়া ১৯ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন।জাতীয় প্রেসক্লাব কনফারেন্স লাউঞ্জে শুক্রবার সকালের গুম হওয়াদের ১৯ টি পরিবারের সদস্যরা এক অনুষ্ঠানে একত্রিত হন। স্বজন হারানোদের কান্নায় পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে এ অনুষ্ঠানে।গত ২০১৩ সালে ৬ ডিসেম্বর গুম হওয়া নিজাম উদ্দিন মুন্নার বাবা সামছুদ্দিন বলেন, ‘ আমরা একটাই পরিচয় গুম হওয়া সন্তানের পিতা। এই পরিচয় আর কারও হোক তা কামনা করি না। অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে চাই না। সরকারের কাছে একটা চাওয়া- আমাদের সন্তানকে মেরে যেখানে রাখা হয়েছে, সেই মাটিটা আমাকে দেখিয়ে দিন। যেন মাটিটা ছুয়ে সান্তনা পেতে পারি। জিয়ারত করতে পারি।’ গুম হওয়া পারভেজের শিশু কন্যা হৃদির আকুতি সে বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়, পার্কে হাঁটতে চায়। অবুঝ শিশুর অবুঝ আবদার, যে তার বাবাকে এনে দেবে সে তাকে তার জমানো চকলেট দিয়ে দেবে।গত ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজের খাতুন বলেন, ‘দুই বছর পার করেছি, আর পারছি না। সাংবাদিক ভাইয়েরা আপনারা ভাল করে লিখবেন যেন আমাদের সন্তানদের ফেরত পাই। এ কথা বলেই ডুকরে কেঁদে উঠেন। পরে আর তিনি কথা বলতে পারেনি।
২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর গুম হওয়া খালিদ হাসান সোহেলের স্ত্রী শাম্মী সুলতানা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘জেল গেট থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর পরিচয়ে আমরা স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন ফেরত পাইনি। আমার দুই বছরের সন্তান পিতা ছাড়া সময় পার করেছে। আমরা সন্তানের সেই শৈশব ফিরিয়ে দিন।’একই বছরের ২ ডিসেম্বর গুম হওয়া সোহেলের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী রাজু বলে, ‘বাবা আমার জন্ম দিনের ফুল কিনতে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেননি। বাবা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অচল। বাবা ফিরিয়ে দিন।’সোহেলের সঙ্গে গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের শিশু কন্যা হৃদি বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়। বাবা তাকে আইসক্রিম কিনে দিবে সেই অপেক্ষায় বসে থাকে। সে বলে, ‘আমি বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চাই, বাবা আইসক্রিম কিনে আনবে। মা আইসক্রিম কিনে দেয় না। মার কাছে টাকা নেই। আমার বাবাকে যে এনে দিবে আমার কাছে অনেক চকলেট আছে, আমি তাকে চকলেট দেব। আমি বাবার সাথে শিশু পার্কে যেতে চাই। রাতে আমি বাবার জন্য কান্না করি, মাও কান্না করে বাবা আসে না।’ ওই বছরের ৫ই ডিসেম্বর গুম হওয়া আদনান চৌধূরীর বাবা রুহুল আমীন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে পোশাকদারী র্যাব-১ পরিচয়ে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। তারা আমার ছেলেকে ফেরত দিয়ে যাবে বলেছিল। আজও ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন-প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে প্রশাসন আমরা ছেলেকে ফিরিয়ে দেবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন – সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন মারুফা ইসলাম। ২০১৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাজধানীতে গুম হওয়া ১৯ সদস্য হলেন- সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাহিদুল করিম তানভীর, আবদুল কাদের ভুঁইয়া মাসুম, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আসাদুজ্জামান রানা, আল আমিন, এম এ আদনান, কাউসার, সেলিম রেজা পিন্টু, খালিদ হাসান সোহেল, সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম, পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল, মো. সোহেল চঞ্চল, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, মাহবুব হাসান সুজন।