নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেটপোস্ট২৪ডটকম : ভূমিকম্পের ‘জেঞ্জার জোন’ হিসেবে পরিচিত সিলেটে দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি শূণ্যের কোঠায়। সম্প্রতি সিডিএমপি জরিপ চালিয়ে ঘোষণা করে বড় ভূমিকম্প হলে ৩০ হাজারের বেশি ভবন ধসের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি নতুন নির্মিত ২ শতাধিক ভবন নির্মানে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র না নেওয়ায় দূর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে এগুলো। সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করেছেন সিলেট ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে যে ধরণের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেই সিলেটে।
জানা গেছে, গত দু’দিনে সিলেটসহ সারাদেশে দু’দফা ভূমিকম্পের পর আবারো আলোচনায় এসেছে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য দূর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে। সাধারণত একশ’ বছর পরপর বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে। সর্বশেষ ১৮৯৭ সালে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল গোটা সিলেট। সেই ঘটনার ১শ’ বছর অতিক্রম হওয়ায় আবারো সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্পের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ছোটবড় অনেকগুলো পেকট্রনিক প্লেটের উপর পৃথিবীর অবস্থান। ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান ও ইউরোশিয়ান এই বড় প্লেটে দুটির সংযোগস্থল সিলেটের কাছাকাছি অবস্থিত। এই প্লেট দুটির ঘর্ষণের ফলে প্রায়ই সিলেট অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্প সিলেটে ‘বড় ভূইছাল’ নামে পরিচিত। সে সময় মারা গিয়েছিল সিলেটে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। বর্তমানে এই অঞ্চলে হওয়া ঘন ঘন ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের আগাম সংকেত বলেও মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটে গত এক দশকে গড়ে উঠা ২ শতাধিক ভবনেও ভূমিকম্প মোকাবেলায় নেই যথাযথ ব্যবস্থা। দ্বিতল বা তার চেয়ে বেশি উচ্চতার ভবন নির্মাণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ‘সেফটি প্ল্যান’ ছাড়পত্র গ্রহণ করার বিধান থাকলে ভবন মালিকেরা এ ধরণের কোনো ছাড়পত্র নেননি। দুর্যোগ দেখা দিলে নিরাপদে বের হওয়ার জন্য প্রতিটি ভবনে জরুরি বর্হিগমন রাস্তা, অগ্নি নির্বাপনের জন্য পানি, ড্রাই পাউডার ও ফায়ার এক্সটিনগুইসারের ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। একইভাবে ৫ হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের একতলা ভবনের ক্ষেত্রেও ফায়ার সার্ভিসের এ নীতিমালা প্রযোজ্য। কিন্তু এসব ব্যবস্থা না রেখেই সিলেটে একের পর এক গড়ে ওঠছে আকাশচুম্বি বহুতল ভবন।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সিলেট অফিসের সহকারি পরিচালক মো. শহিদুর রহমান জানান, সিলেট ফায়ার সার্ভিসের কাছে নগরীর প্রায় ২শ বহুতল ভবনের তালিকা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভবন মালিক ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রাথমিক অনুমোদন নিলেও চুড়ান্ত ছাড়পত্র নেননি কেউই। ফায়ার সার্ভিসের নীতিমালা না মেনে গড়ে ওঠা ভবনগুলোতে ধ্বস বা অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। ছাড়পত্রহীন ভবনগুলোর বিরুদ্ধে শিগগিরই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে।
এ ব্যাপারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটের পুরোটাই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যেকোনো সময় বড় ধরণের ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে কিছুটা হলেও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ২৫ সদস্যের বিশেষ দল গঠন করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস।