সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : সিলেট সরকারি তিব্বিয়া কলেজের খন্ডকালীন প্রভাষক আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটি এক মাসেও কাজ শুরু করেনি। গত ১৯ মার্চ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগীয় পরিচালককে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়। কিন্তু বেঁধে দেয়া ৩০ কর্মদিবস পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত কাজ শুরু করেনি। অবশ্য, স্বাস্থ্য বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা. হরিপদ দাশ জানিয়েছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা) ডা. গৌরমনি সিনহা স্বাক্ষরিত এক আদেশে সিলেট জেলাধীন সরকারি তিব্বিয়া কলেজের অনারারি প্রভাষক হাকিম আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে সমূহ অভিযোগ তদন্ত করে ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পরিচালক স্বাস্থ্য সিলেট বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য অধিঃ/সঃতিঃকঃ/তদন্ত/২০১৫/ নং স্মারকে গত ১৯ মার্চ আদেশ দেওয়া হলেও এখনো এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর আগেও গত ৭ জানুয়ারী প্রভাষক আক্তার হোসেনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তিন সদস্যের ওই কমিটিকে ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন অধ্যক্ষের কাছে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু, ২৪ জানুয়ারী তদন্ত কমিটির সদস্যরা ‘রহস্যজনক’ কারণে নিজেদের কমিটি থেকে সরিয়ে নেন। এরপর বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানো হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হোমিও ও দেশজ চিকিৎসা) ডা. মো. শামসুল হক স্বাক্ষরিত এক আদেশে গোলাপগঞ্জ উপজেলার চৌগরী গ্রামের মৃত মৌলভী আব্দুল লতিফের পুত্র আক্তার হোসেনকে সিলেট সরকারী তিব্বিয়া কলেজের সার্জারী বিভাগে অনারারী প্রভাষক হিসেবে কাজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বরের এই আদেশে আক্তারসহ আরো ৮ জনকে একই প্রক্রিয়ায় কাজ করার অনুমতি দেয়া হয়। তবে এই অনুমতির ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৭ টি শর্ত বেধে দিয়েছে। ৭ শর্তের মধ্যে বলা হয়েছে, এই আদেশ সম্পূর্ণ অস্থায়ী, অবৈতনিক ও খন্ডকালীন। কর্তৃপক্ষ যে কোন সময় কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে বাতিল করতে পারবে। চাকুরীকাল শুধু অভিজ্ঞতা সনদ হিসেবে ব্যবহার করা হবে। নিয়োগ বাতিল করলে আইনের আশ্রয় নেয়া যাবে না ও এ পদে সরকারী নিয়োগ প্রদান করা হলে এই আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে। অভিযোগ রয়েছে-খন্ডকালীন ও অবৈতনিক কাজের সুযোগ পাওয়ার পর থেকেই তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। খন্ডকালীন কাজ করার অনুমতি পেতে আক্তার হোসেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি আবেদন করেন। আবেদনের সাথে নিজের স্বাক্ষর করা একটি হলফনামাও জমা দেন তিনি। ২০১২ সালের ৭ আগস্ট সম্পাদিত এই হলফনামায় তিনি অঙ্গীকার করে বলেন, ‘আমি সিলেট সরকারী তিব্বিয়া কলেজের একাডেমিক শাখায় অনারারী প্রভাষক (হাকীম) বিনা বেতনে চাকুরী করিতে ইচ্ছুক। এই কাজ করার অনুমতি পত্রটি অধিকার হিসাবে গ্রহণ করিতে পারিব না। পরবর্তীতে নিয়োগের স্বপক্ষে কোন সুবিধা দাবী করিতে পারিব না বা আইনের আশ্রয় নিতে পারিব না। আমার বিনা বেতনে কর্মকাল শুধু অভিজ্ঞতার সনদ হিসাবে বিবেচিত হইবে।’ একশত পঞ্চাশ টাকার স্ট্যাম্পে করা এ হলফনামায় আরো বেশ কিছু বিষয়ে অঙ্গীকার করেন তিনি। এ হলফনামায় কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ হাকীম মো: মুহিব উল্যার সুপারিশ রয়েছে। কিন্তু এখন এই অঙ্গীকার বেমালুম ভুলে গিয়ে উল্টো পথে হাঁটছেন আক্তার। এতো কিছুর পর এই আক্তার হোসেন এখন বেতনের জন্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এজন্যে নানা কৌশলেরও আশ্রয় নিয়েছেন। গত ২১ মে বাংলাদেশ ইউনানী মেডিকেল কলেজ শিক্ষক সমিতির প্যাডে তিনি শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের বরাবরে একটি আবেদন করেন। আবেদনে আক্তার ছাড়াও ডা: সহিরউদ্দীন নামের আরেক জনের স্বাক্ষর রয়েছে। আবেদনে বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার প্রকল্পের পরিচালক কর্তৃক ৪/০৯/২০১২ তারিখে ৫৫ নং আদেশে তিব্বিয়া মেডিকেল কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকুরীরত আছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, প্রায় ২০ মাস ধরে কোন ধরণের সম্মানী, বেতন-ভাতা, টিএ-ডিএ কিছুই দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’ আবেদনে শিক্ষামন্ত্রী সুপারিশ করেছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা: হরিপদ দাশ বলেন, সহকারী পরিচালককে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তে ২/১ দিন দেরি হতে পারে। তবে,তদন্ত প্রতিবেদন কয়েকদিনের মধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।