নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। একই সঙ্গে গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার ও স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা ক্রমহ্রাসমান না রেখে শতভাগ রাখার দাবি জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে আসছে বাজেটে করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া বলেন, পুঁজিবাজার একটি কঠিন সময় অতিক্রম করছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশন পরবর্তী স্টক এক্সচেঞ্জকে ২০১৫-১৬ সাল থেকে ক্রমহ্রাসমান হারে পাঁচ বছর মেয়াদি কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় এ বছর থেকেই কর দিতে হবে স্টক এক্সচেঞ্জকে। এ বছর শতভাগ এ সুবিধা পেলেও পরের বছরগুলোতে কর অব্যাহতির হার পর্যায়ক্রমে কমবে।
তিনি বলেন, এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগামী অর্থবছর আয়ের ৮০ শতাংশ ও পরের অর্থবছর ৬০ শতাংশ হারে কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কর অব্যাহতি মিলবে আয়ের ৪০ শতাংশ এবং তার পরের অর্থবছর কর অব্যাহতির হার হবে ২০ শতাংশ। তবে এ পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ পাঁচ বছরই শতভাগ কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া দরকার।
ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের মন্দাভাবের মধ্যে হঠাত্ করে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত মুনাফায় ১০ শতাংশ কর দিতে হয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের। অংশীদারি প্রতিষ্ঠান, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের মূলধনী মুনাফা এ করের আওতাভুক্ত। মন্দাভাবের মধ্যে পুঁজিবাজার রক্ষায় এ ট্যাক্স প্রত্যাহার দরকার।
ডিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে যেকোনো শেয়ার, ডিবেঞ্চার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড বা অন্য সিকিউরিটিজ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের দশমিক ০৫ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরে এটি কমিয়ে দশমিক ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা দরকার।
মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আক্তার এইচ সান্নামাত বলেন, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে এ করের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। এজন্য করপোরেট করহার কমানোর প্রস্তাব দেন তিনি।
বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন বলেন, অর্থ আইন-২০০২-এ ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে করের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা অর্থ আইন-২০০৩-এর মাধ্যমে পরিবর্তন করে ৪২ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়। তবে বীমাকে কেন ব্যাংকের একই পাল্লাতে মাপা হবে, তা বোধগম্য নয়। দেখা যাচ্ছে, অপরাপর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের আয়করের হার ধীরে ধীরে কমে এলেও ব্যাংক/বীমার করের হার বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই তিনি সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর (জীবন বীমা কোম্পানি ব্যতীত) করের হার অপরাপর লিস্টেড কোম্পানির মতো করার প্রস্তাব দেন। একই সঙ্গে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ডিপোজিট হোল্ডারদের মুনাফার ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। এছাড়া এসএমই ফাইন্ডেশনের পক্ষ থেকে কোমল পানীয়ের স্ট্যাম্প/ক্রেতার কাছ থেকে ধার্যকৃত ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করার জন্য সুপারিশ করাসহ প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এনবিআর সদস্য এনায়েত হোসেন, পারভেজ ইকবালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।