ফয়ছল আহমদ, সিলেটপোস্ট : রাজার বহর ছুটে চলছে। কাঠ দিয়ে তৈরি গাড়ি নিয়ে দেখছেন প্রজাদের সুখ দু:খ। শুধু গাড়ির বহর নয়, রাজা হাতিতে সওয়ার হয়েও ঘুরে বেড়াচ্ছেন পুরো রাজ্য। ১৮ শতকের জমিদার সাজিদ রাজা গত হয়েছেন। কিন্তু তার রাজ্য পরিচালনা কিংবা প্রজাহিতৈষীর গল্প মুখে মুখে রয়ে গেছে ২০০ বছর পরও। আজো জকিগঞ্জের মানুষের প্রবীনের বলেন, ধর্মপ্রাণ সাজিদ রাজা ছিলেন প্রজাহিতৈষী। প্রজাদের মঙ্গল কামনায় সাজিদ রাজা রাজ্যময় ঘুরে বেড়াতেন। প্রজাদের পানি সমস্যা দূর করতে ৮ একর ভূমিতে খনন করেন দীঘি। নিজ বাড়ির আঙ্গিনার এ দীঘি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে বড় মনের পরিচয় দেন। এছাড়া প্রজাদের নামাজের জন্য গড়ে তোলেন সুদৃশ্য মসজিদ। ছিলো তার নিজস্ব বিচারালয়ও।
কালের পরিক্রমায় ২ শতক পার হলেও টিকে আছে সাজিদ রাজার কীর্তি। পর্যটকদের কাছে সম্ভাবনাময় স্থান হয়ে উঠছে জকিগঞ্জের রায় গ্রামের সাজিদ রাজার বাড়ী। ১৮ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত ধর্মপ্রাণ এ জমিদারের বাড়িটি পর্যটকদের কাছে নতুন আকর্ষন। রাজার হাতে নির্মিত তার বাড়ি, বিচারালয়, মসজিদ ও পুকুর আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। দেশ বিদেশের প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এ বাড়িটি দেখার জন্য।
জানা গেছে, ১৮ শতকের প্রথম দিকে জকিগঞ্জের উপজেলা ও এর আশপাশ শাসন করতেন তখনকার জমিদার সাজিদ রাজা। অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এ রাজা তার প্রাজাদের দেখভাল করার জন্য কাঠ দ্বারা নির্মিত গাড়ি ও হাতিতে সওয়ার হয়ে পুরো রাজ্য ঘুরে বেড়াতেন। জনগনের ন্যায় বিচার করার জন্য নিজ বাড়িতে নির্মাণ করেন বিচারালয়। ধর্মপ্রাণ এ রাজা ধর্র্মীয় কাজ করার জন্য নির্মাণ করেন মসজিদ। যা এখন ও মুসল্লিরা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করছেন। সুরমা ও কুশিয়ারা নদী বিধৌত এ অঞ্চলে বরাক নদীর উজান ঢলে ভেসে যেত এ জনপদ। তখন জনগন পানির জন্য হাহাকার করত। রাজা জনগনের পানির হাহাকার দূর করার জন্য নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় ৮ একর ভূমির উপর খনন করেন পুকুর। রায় গ্রাম ও এর আশপাশ জনগন এখনও পুকুরটি ব্যবহার করেন। প্রতিদিন অনেক পর্যটক আর ইতিহাস অনুরাগী রাজার বাড়ি দেখে যান। মাঝে মধ্যে বিদেশি পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায়।
এ ব্যাপারে সাজিদ রাজা স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ফারুক আহমদ জানান, ধর্মপ্রাণ এ রাজার বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আমরা এলাকার জনগনকে নিয়ে রাজার স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু আদর্শ সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ফারুক উদ্দিন চৌধুরী জানান, কর্তৃপক্ষ যদি রাজার বাড়িটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সংরক্ষন করত তবে দেশ-বিদেশে পর্যটকদের কাছে বাড়িটি আকর্ষনীয় হত। এতে দিন দিন পর্যটকের পরিমান বাড়ত।
বেসরকারি এনজিও সংস্থা সীমান্তিকের সাবেক মহাসচিব মালেক আহমদ বলেন রাজার বাড়িটিকে সংরক্ষন করার জন্য আমরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছি।