সিলেটপোস্টরিপোর্ট: এ বছর আমে ফরমালিন ঠেকাতে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। আম ব্যবসায়ীরা যেনো অপরিপক্ক কাঁচা আম বাগান থেকে পেড়ে ফরমালিন মিশিয়ে বাজারজাত করতে না পারে সেজন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলের বেশ কয়েকটি বড় আমের বাজারে ফরমালিন মেশানো আম জব্দ করতে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। কোনো কোনো এলাকায় ৫ জুন পর্যন্ত আম বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আমে ফরমালিন ঠেকাতে রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর বাজারে অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। ৯ মে চারঘাটের পান্নাপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২০ মণ অপরিপক্ক আম জব্দ করে ধ্বংস করেছে প্রশাসন।
বাজারে অপরিপক্ক আম যেন না আসে সেজন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া ফরমালিন বন্ধে চারঘাট ও বাঘায় ৫ জুন পর্যন্ত আঁটি আম ব্যতীত অন্য আম বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, একটি অসাধু চক্র আমে ফরমালিন মিশিয়ে প্রতিবছর বাজারজাত করে। এজন্য প্রশাসন থেকে অভিযান চালিয়ে প্রতিবছর প্রচুর আম ধ্বংস করা হয়। এবছর আমরা ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, যাতে কোনোভাবে বাজারে অপরিপক্ক আম না আসতে পারে। এজন্য আমরা কয়েকটি ধাপে আম বাজারজাতকরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছি বলে জানান তিনি।
রোববার বানেশ্বর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অপরিপক্ক আম বাজারজাতকরণ ঠেকাতে প্রশাসন কর্তৃক গঠিত পরিদর্শক দল কাজ করছে। তারা আঁটি জাতের আম ছাড়া অন্য কোনো জাতের আম বাজারজাতকরণ যাতে না করা হয় সেজন্য ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। কয়েকদিন ধরেই অপরিপক্ক আম বাজারজাতকরণ ঠেকাতে নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন পরিদর্শক দলের সদস্যরা।
পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার ফরহাদ আহমেদ বলেন, বাজারে প্রচুর আঁটি আম উঠছে। এসব পরিপক্ক আম। তাই এসব আম বাজারজাতকরণে বাধা দেয়া হচ্ছে না। তাছাড়া এসব আমের প্রচুর চাহিদা আছে মানুষের কাছে। কিন্তু আঁটি জাতের বাইরে ভালো জাতের আম যেমন গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগর বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারণ এসব আম এখনো পরিপক্ক হয় নি। তাই এ জাতের আমগুলো বাজারজাতকরণ বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।
বানেশ্বর বাজারে আম বিক্রি করতে এসেছেন আড়ানীর বাসিন্দা আকবর হোসেন। তিনি জানান, এখন আঁটিজাত আমের মৌসুম। আঁটিজাতের আম পাকা শুরু করেছে। এগুলো বাজারে বিক্রি করা যায়। ফরমালিন মেশানোর সুযোগ থাকে না। ভালো জাতের আমগুলোতেই শুধু ফরমালিন মেশানো হয় বলে জানালেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আঁটি জাতের আম খেতে অতোটা সুস্বাদু না হলেও আচার, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদ তৈরিতে এসব আমের জুড়ি নেই। আবার এসব আম গাছেও বেশিদিন রাখা যায় না। তবে এর বাইরে অন্য কোনো জাতের আম বিক্রি হলে সেগুলোতে অবশ্যই ‘মেডিসিন’ মেশানো আছে বলে জানালেন তিনি।
এদিকে গত শুক্রবার থেকে স্থানীয় প্রশাসন চারঘাট ও বাঘায় ৫ জুন পর্যন্ত ভালো জাতের আমের বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চারঘাট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা একেএম মুঞ্জুরে মাওলা জানান, উপজেলায় গুটি আম পাকতে শুরু হয়েছে। কারণ এখন গুটি আমের মৌসুম। তবে অন্য জাতের আম যেমন গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও ক্ষীরসাপাত পাকার এখনো সময় হয় নি। এজন্য গুটি ছাড়া অন্য জাতের আম বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কোনো আমচাষী বা ব্যবসায়ীকে গুটি আম বাদে অন্য জাতের আম বাজারজাত করতে দেখলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বাঘা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বাদলচন্দ্র হালদার জানান, ফরমালিন বিষাক্ত ক্ষতিকর পদার্থ। এটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এর প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের আগামী ৫ জুনের আগ পর্যন্ত আম বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।