সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : পোশাক কেনার পর বাহারি ডিজাইনের যে জিনিসটি বিনামূল্যে পাওয়া যায় তা হচ্ছে দোকানের নাম-ধাম সংবলিত একখানি কাগুজে ব্যাগ। প্রতিদিন হাজারো নারী শ্রমিকের হাতে প্রতি মাসে উৎপন্ন হচ্ছে কোটি টাকার কাগুজে ব্যাগ। এ ব্যাগ দিয়ে দারিদ্র্য জয় করেছেন রংপুর মহানগরীর বাহার কাছনা মহল্লার বাসিন্দারা। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সারা দেশ এবং বিদেশে পাঠিয়েও এ কাগুজে ব্যাগ বদলে দিতে পারে রংপুর অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন। সরেজমিন দেখা গেছে, মহাজন ও ফড়িয়া হিসেবে দু’শতাধিক ব্যক্তি সরাসরি যুক্ত আছেন এ পেশায়। রংপুর মহানগরী ও থানা পর্যায়ে ব্যাগের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলায় সরবরাহ হয় এ কাগুজে ব্যাগ। একেক মহাজনের শুধু ঈদের সময় ব্যাগ সরবরাহের সংখ্যা গড়ে লক্ষাধিক। তাজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ব্যাগ। তার হাতে আরও দেড় লাখ ব্যাগ তৈরির অর্ডার আছে। স্টেশন এলাকার নেছার আলী তার নিজের কারখানায় ব্যাগ বানিয়ে নেন। চাপ বেশি থাকায় এ সময়টাতে তিনি স্টেশন এলাকায় ব্যাগ বানিয়ে নিচ্ছেন। তিনি গতবার প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার ব্যাগ সরবরাহ করেছেন। রংপুরে ব্যাগ উৎপন্নকারী তাজুল ইসলামের মতো অনেকেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। তাজুলের তাজুল প্যাকেজিং, পরম প্যাকেজিং, নেছার প্যাকেজিং, মোস্তাক ব্যাগ হাউস, শামীম প্যাকেজিং, রাজ্জাক ব্যাগ ঘর, শফিক প্যাকেজেস, জামিল প্যাকেজিং, ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজ ইত্যাদি। সাধারণত মহাজনরা সরাসরি দোকানদারের কাছ থেকে অর্ডার সংগ্রহ করেন। ছোট সাইজ প্রতি হাজার ব্যাগে কাগজ ভেদে ১ হাজার আটশ’ থেকে ২ হাজার দুইশ’ টাকা, মাঝারি সাইজের ৩ হাজার থেকে তিন হাজার তিনশ’ টাকা, বড় সাইজের ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার পাঁচশ’ টাকার মধ্যে অর্ডারগুলো হয়ে থাকে বলে জানালেন শামীম প্যাকেজিংয়ের শামীম। মহাজনরা জানান, ঈদের এ সময়টাতে দেড় কোটির বেশি ব্যাগ রংপুর থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে, যার বাণিজ্যিক মূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মহাজন ও ফড়িয়াদের মতে, তাদের এ শিল্পে কাঁচামালের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কাগজ দোকানদাররা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট করে ইচ্ছেমতো কাগজের দাম বাড়িয়ে দেন। রয়েছে সুতা বা ফিতা প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা। তারা জানান, তাদের অর্ডারের একটা বিশাল অংশ কাগজ ও সুতা ক্রয়ে চলে যায়, তারপর যা অবশিষ্ট থাকে তা অপ্রতুল, যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ব্যাগ শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো যাচ্ছে না। তবে এ শিল্পে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শ্রমিক-মালিক সবার স্বার্থ রক্ষা হবে বলে তারা মনে করেন।
তবে দুই ঈদ আর পূজায় এ ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠলেও বছরের বাকি সময়টাতে মন্দা দেখা দেয়। ফলে জড়িত নারী শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েন। তারা অবিলম্বে এ ব্যবসায় সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবি করেন। হালিমা নামের এক নারী শ্রমিক জানান, এখন বাজার চড়া। তবে যে মজুরি আমরা পাই তা দিয়ে সংসার চালাতে পারি, কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য নেই। তিনি মজুরি বাড়ানোর দাবি করেন। এ ব্যাপারে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব টিটু জানান, এই কুটির শিল্পের মাধ্যমে বহু মানুষ তাদের দারিদ্র্য জয় করেছে। এ ব্যবসায় ব্যাংকগুলোকে কম সুদে অর্থলগ্নি করা প্রয়োজন। তাহলে এই শিল্প এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা বদলে দিতে পারবে।