সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গি নেটওয়ার্ক বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বেগ ও তার সহযোগী সাকিব বিন কামাল কথিত জিহাদের নামে ইন্টারনেটে প্রচারণায় নামেন। নিজেদের মতাদর্শ প্রচারে গড়ে তোলেন অনলাইন নেটওয়ার্ক। এ পর্যন্ত তাদের নেটওয়ার্কে ৩০২ জন রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। এদের মধ্যে ২০ জনের নাম-পরিচয়ও জানা গেছে। আমিনুল ইসলাম বেগ ও সাকিব বিন কামাল নামের দুই আইএস অনুসারীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন অনেক তথ্যই বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আইএসের সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন জঙ্গিদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। দীর্ঘদিন ধরে উগ্র-কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটকেই বেশি ব্যবহার করছে তারা। গ্রেপ্তার জঙ্গিদের প্রত্যেকের ফেসবুক পেজে নানা বিষয়ে উসকানিমূলক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। এসব তথ্যের সূত্র ধরেই চলছে তদন্ত।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মালেয়েশিয়া থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে লেখাপড়া শেষ করে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোমল পানীয় কোম্পানির আইটি বিভাগের চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমিনুল ইসলাম বেগের ধ্যান-জ্ঞান ছিল আইএস। চাকরির বাইরে যতটুক সময় পেতেন তিনি আইএস নিয়ে গবেষণা করতেন।
২০১৩ সাল থেকে তিনি আইএস সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য পেতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে এ সংগঠনটির ইরাক-সিরিয়াকেন্দ্রিক শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। তিনি ফেসবুক পেজ খুলে আইএস সম্পর্কে সহকর্মীদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করতেন। তিনি আইএস সম্পর্কে নিজস্ব গবেষণা ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে যা জানতে পারতেন তা ফেসবুক ও নিজস্ব ব্লগে লিখতেন।
অনলাইনে তার লেখা পড়ে বাংলাদেশের ফরিদপুরের গাজী সোহান, রাজশাহীর নাজিব উল্লাহসহ দেশের অন্যান্য জেলার সিফাদ, মাহমুদুল্লাহ, আতিকসহ ২০ জনের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে তিনি অনলাইনে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন।
ইন্টারনেটে তার সঙ্গে যোগাযোগকারীদের মধ্যে কেউ প্রকোশলী, কেউ ডাক্তার, কেউ সরকারি কর্মকর্তা আবার কেউ কেউ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরা সবাই সিরিয়া ও ইরাকে গণহত্যা চালানো আইএসের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুতি নেয় বলে গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন আমিনুল।
উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী সংগঠনের সদস্যরাই আইএসের সহযোগী বলে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তথ্য মিলেছে। এগুলোর উল্লেখযোগ্য হলো ইসলামের আলো, বাঁশেরকেল্লা, সালাউদ্দিনের ঘোড়া (জসিমউদ্দিন রাহমানীর পেজ), দৃষ্টিভঙ্গি, দ্য মেসেজ অব ইসলাম, ইসলাম-ই-রাজনীতি, শিবির সংবাদ, জিহাদের ঝান্ডা আমরা চিরদিন উঁচু রাখব, বাগদাদ থেকে বাংলা, জিহাদ আর জিহাদ, আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট), তিতুমীর-১, তিতুমীর-২, বাঁশেরকেল্লা (ফিনল্যান্ড, লন্ডন, ইউএসএ), বাঁশেরকেল্লা-নিউ, টিনের চালে কাক আমি তো অবাক। এ ধরনের অনেক ধর্মীয় উসকানিমূলক ওয়েব পেজে লাইক দিয়েছে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তার ফেসবুক পেজে জঙ্গি লিংক ব্যাপক হারে পাওয়া যায়। সেখানে কয়েক হাজার লাইক পড়ে। এভাবে ক্রমান্বয়ে ওয়েব পেজের মাধ্যমে জঙ্গি প্রচার বাড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি।
সূত্র জানায়, আমিনুল নিজেও ইরাক-সিরিয়ায় যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই পথের বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার মা মাহমুদা ইসলাম। তবে গত রোববার উত্তরা এলাকার বাসা থেকে গোয়েন্দারা যখন আমিনুলকে গ্রেপ্তার করতে যান তখন আমিনুল ও তার মা বাসায় ছিলেন। ডিবি কর্মকর্তারা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় ঢোকার পরই আমিনুলের মা জানালা দিয়ে দোতলা থেকে ছেলের ল্যাপটপটি নিচে ফেলে দেন। পরে রাস্তা থেকে আমিনুলের ল্যাপটপটি জব্দ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
আমিনুলকে গ্রেপ্তার করার সময় তার মা ছেলেকে বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম, উগ্রপন্থায় বিশ্বাস এনো না, এ পথ ছেড়ে দাও। এখন বুঝলে মায়ের কথা না শুনলে কি হয়।