সংবাদ শিরোনাম
ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিচার বিচার দেশের মাটিতেই হবে : এমরান চৌধুরী  » «   ওসমানীনগরে ছাত্র দল নেতা নুনু স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে দোয়া ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সিলেট মহানগর কৃষকদলের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ  » «   ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: কয়েস লোদী  » «   ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ায় দেশের জনগণ অন্যায় ও জুলম থেকে মুক্তি পেয়েছেন-ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন  » «   নির্বাচন নিয়ে যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে: কাইয়ুম চৌধুরী  » «   সুনামগঞ্জের মধ্যনগরে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা খুন  » «   মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটির দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সিলেট নগরীর গার্ডেন টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাটে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের লিপ্ত থাকায় পাঁচ নারী ও এক পুরুষ আটক  » «   জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিএনপি জনগণের পাশে আছে : আব্দুর রাজ্জাক  » «   ৩০ বছর ধরে মিটাভারাং ও মজলিশপুরসহ অর্ধশত গ্রামের মানুষ একটি বাঁশ বেতের সেতু দিয়ে চলাচল করছেন  » «   ফ্যাসিসদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিই ধর্ষণের কারণ-কয়েস লোদী  » «   সিলেট মহানগর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আনন্দ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত  » «   দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসিম-কমিশনার রেজাউল করিম  » «   ফুটপাত দখলমুক্ত আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের সমর্থন, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি  » «  

মায়ের ব্যাংক, নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক

IMG_20150527_123813ফয়ছল আহমদ : প্রতি বছর নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে সূর্যের হাসি ক্লিনিক সমূহ তাদের নিজ নিজ ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। বেসরকারী এনজিও সংস্থা সীমান্তিক পরিচালিত সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার ও কানাইঘাট শাখার সূর্যের হাসি ক্লিনিক সমূহে দিনব্যাপী গর্ভবতী মা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানা কর্মসূচী নেয়া হয়। এবারের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো ‘প্রতিটি জন্মই হোক পরিকল্পিত, প্রতিটি প্রসবই হোক নিরাপদ’। সীমান্তিক পরিচালিত সূর্যের হাসি ক্লিনিকের কর্মসূচীর মধ্যে র‌্যালী ও আলোচনা সভা, মায়ের ব্যাংক, লাল পতাকা, ওয়ান ফোন কল, তিন দিনের পাহারা বিষয়ক আলোচনা, ডিসকাউন্ট কুপন লটারীর আয়োজন ইত্যাদি।

মায়ের ব্যাংক
নিরাপদ মাতৃত্বে যে তিনটি দেরি গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসাবে চিহ্নিত হয় তা- ১। সেবা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী ২। চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে দেরী ৩। সঠিক চিকিৎসা পেতে দেরী। এর মধ্যে দ্বিতীয় বাধাটি প্রয়োজনীয় মুহুর্তে অর্থের সংস্থানের মাধ্যমে দূর করা অনেকাংশেই সম্ভব। গর্ভবতী মা প্রতিদিন অল্প অল্প করে অর্থ সঞ্চয় করলে প্রসবকালীন প্রয়োজনে এই সঞ্চয় মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষা করতে পারে। মায়ের ব্যাংক নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক। সূর্যের হাসি ক্লিনিক গর্ভবতী মায়েদের প্রথম ভিজিটের সময় মায়ের ব্যাংকে টাকা জমাতে উৎসাহিত করে। গর্ভবতী মায়ের প্রথম ভিজিট প্রসব পরিকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রসব পরিকল্পনা বলতে বোঝায়, একজন গর্ভবতী মা এর গর্ভধারণ ও প্রসবকালীন যে বিশেষ সেবা ও সহায়তার প্রয়োজন (যেমন- প্রয়োজনীয় অর্থ জমানো, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা, রক্তের গ্রুপ জানা ও রক্তদাতা নির্বাচন করে রাখা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সেবাদানকারীর তথ্য জানা ইত্যাদি)। সে বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে মাকে স্বাবলম্বী করে তোলা, যাতে মা তার নিয়মিত প্রয়োজনীয় সেবাগ্রহণ ও জরুরী অবস্থা মোকাবেলা করে নিজেকে এবং নবজাতককে বাঁচিয়ে রাখার ব্যাপারে স্বাবলম্বী হয়। মায়ের ব্যাংক গর্ভবতী মায়ের জন্য গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী জরুরী সেবা গ্রহণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে এক্লাম্পসিয়া ও রক্তক্ষরণসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসার জন্য জরুরীভাবে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যেতে চিকিৎসা ও পরিবহন খরচ বাবদ তাৎক্ষনিক ভাবে টাকার প্রয়োজন। হাসপাতালে বা বাড়ীতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ সেবাদানকারীর হাতে প্রসব সেবা পাওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন হয় বা প্রসব পরবর্তী ৩ দিন বিভিন্ন জটিলতার কারণে মা ও শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয় এবং তাৎক্ষনিক চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হয় যা মায়ের ব্যাংক এ জমানো টাকা দিয়ে হতে পারে। মায়ের ব্যাংক এর জমানো টাকা মায়ের হাতে থাকার কারণে জরুরী ভিত্তিতে মা তার নিজের স্বাস্থসেবা নিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে যা গর্ভবতী মায়ের ক্ষমতায়নের প্রতীক মনে করা হয়।
মায়ের ব্যাংকে শুধু যে গর্ভবতী মা টাকা জমাবে তা নয়। মা ও শিশুকে গর্ভ ও প্রসবজনিত বিভিন্ন জটিলতার সময় জরুরী সেবা দিয়ে মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে গর্ভবতী মা, তার স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ীসহ পরিবারের সকলেই মায়ের ব্যাংক-এ টাকা জমাতে পারে। মায়ের ব্যাংকে টাকা জমানোর ফলে মা যে শুধু গর্ভ সংক্রান্ত কাজে টাকা ব্যয় করার জন্য এমন নয়। মায়ের ব্যাংক এ টাকা জমানোর কারণে মা-সহ পরিবারের সবার মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে উঠে এবং এই সঞ্চয় শুধু মায়েরই হয়। সঞ্চিত টাকা পরবর্তীতে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও স্বাস্থ্য সেবায় অথবা অন্যান্য আয় বৃদ্ধিমূলক কাজেও ব্যবহার করা যায়।
মায়ের ব্যাংকে জমানো টাকা মায়ের সাহস বাড়ায়, ক্ষমতা বাড়ায়, মায়ের মূল্য বাড়ায়।

লাল পতাকা উত্তোলন
গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত কল্পে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হচ্ছে লাল পতাকা উত্তোলন। বাংলাদেশে এখনও বছরে ৩০ লক্ষ শিশুর জন্ম হয়। যার মধ্যে ২৪ লক্ষ শিশুর জন্ম হয় বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন অথবা অপ্রশিক্ষিত দাই এর হাতে (বিএমএমএস-২০১০)। কমিউনিটির বেশির ভাগ মানুষই গর্ভধারণ বিষয়ে সচেতন না হওয়ায় গর্ভকালীন জরুরী প্রয়োজনের সময় তারা প্রসূতীর পাশে দাঁড়াতে পারে না। তাই বাড়ীতে গর্ভবতী মায়ের উপস্থিতির সংকেত স্বরুপ সেই বাড়ীকে লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিত করার মাধ্যমে কমিউনিটিতে বিশেষ করে দরিদ্র ও অতি দরিদ্রদের মাতৃস্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হয়।
গর্ভবতী মার ৫টি বিপদ চিহ্ন ও ৩টি দেরী হতে মাকে রক্ষা করা সহ কমিউনিটির মানুষকে সজাগ রাখতে ও জরুরী প্রয়োজনে গর্ভবতী পরিবারের সহযোগীতায় এগিয়ে আসতে লাল পতাকা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনদিনের পাহারা
গর্ভবতী মার প্রসবের ৩দিন পর্যন্ত মাও শিশুর মৃত্যু ঝুকি বেশি থাকে। তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কমানোর জন্য সূর্যের হাসি ক্লিনিক ৩দিনের পাহারা কার্যক্রম পরিচালনা করে। তিনদিনের পাহারার কারণ হল- প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রসবের সময় থেকে ৩দিন সময়কালে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার সবচাইতে বেশি। মা-কে পাহারার মাধ্যমে জটিলতা নিরুপন করে জরুরী ভিত্তিতে সেবার ব্যবস্থা নিলে মা ও শিশুকে বাঁচানো সম্ভব। গর্ভবতী মায়ের মৃত্যুর কারণের প্রধান প্রধান জটিলতা সমূহ হল- ১। প্রচুর রক্তক্ষরণ ২। এক্লাম্পশিয়া ৩। দীর্ঘ প্রসব বেদনা (১২ ঘন্টার বেশী) এবং ৪। অন্যান্য। প্রসবকালীন সময় (প্রসব ব্যথা ওঠার পর থেকে তিন দিন) তিনদিন পাহারা দিতে হয়। ৪ জনের একটি টিম মাকে পাহারার দায়িত্বে থাকে। এই ৪ জন হলেন-
১। গর্ভবতী মায়ের পরিবারের একজন সদস্য।
২। একজন প্রতিবেশী (যে প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারে)।
৩। এলাকার সিএসপি (সূর্যের হাসি ক্লিনিকের মাঠ কর্মী)
৪। কাছাকাছি থাকে একজন কমিউনিটি সাপোর্ট গ্রুপের একজন সদস্য।
গর্ভবতী মায়ের প্রধান প্রধান জটিলতা দেখা দিলে পাহারা টিমের দায়িত্ব থাকে অবিলম্বে মাকে হাসপাতালে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা। পাহারা টিমের আরো করণীয় থাকে নিয়মিত গর্ভবতী মায়ের খবরাখবর নেয়া, প্রসব সময়ে জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য মাকে প্রস্তুত করা। পরিবারের সাথে কথা বলে মায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
সূত্র : এনএইচএসডিপি

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.