সিলেট পোস্ট রিপোর্ট : বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ১২ জনের ব্রিটিশ একটি পরিবারের ইসলামিক স্টেট নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পালিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে তাদের পৈতৃক ভিটায় দফায় দফায় যাচ্ছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। বিবিসির সংবাদদাতা আকবর হোসেন গত দুদিন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও গ্রামে গিয়ে পোশাকধারী পুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আনাগোনা দেখেছেন।
গোয়েন্দারা ওই গ্রামের আবদুল মান্নানের (যুক্তরাজ্য প্রবাসী পরিবারের ১২ সদস্যের একজন) ওই পরিবারের ঘনিষ্ঠ স্বজনদের বাড়িতে যাচ্ছেন এবং দফায় দফায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা বলেছেন, তারা জানার চেষ্টা করছেন ব্রিটিশ ওই পরিবারটির আইএসে যোগ দেওয়া সম্পর্কে আগে থেকে মাইজগাঁওয়ের স্বজনরা কিছু জানতেন কি না।
এখনো তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হচ্ছে কি না, সেটাও তারা জানার চেষ্টা করছেন।
বড় ভাইয়ের অন্তর্ধান এবং তারপর থেকে বাড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর আনাগোনায় কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, ‘আইএস নিরীহ মুসলিম পরিবারের মগজ ধোলাই করছে … আমিও তার শিকার।’
মে মাসে মাসখানেক ছুটি কাটিয়ে ব্রিটেনে ফেরার পথে পরিবারটি তুরস্ক থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। দুদিন আগে আইএস ইন্টারনেটে এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, পরিবারটি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ব্রিটিশ পুলিশেরও ধারণা, লন্ডনের কাছে লুটন শহরের গোঁড়া মুসলিম এ পরিবারটি তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় চলে গেছে।
উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী
এদিকে এলাকার একটি পরিবারের সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের নাম জড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁওয়ের অনেক লোক।
সংবাদদাতা আকবর হোসেন বলছেন, এ এলাকার সিংহভাগ পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য ব্রিটেনে থাকেন। প্রতি বছরই নতুন নতুন মানুষ পরিবারের সঙ্গে যোগ দিতে ব্রিটেন যান। তাদের অনেকেই ব্রিটেনে সিলেটি জনগোষ্ঠীর ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ভবিষ্যতে এখান থেকে ব্রিটেনে অভিবাসন কঠিন হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়েও চিন্তিত তারা।
মাইজগাঁও বাজারের দোকানদার শাহীন মিয়া কদিন ধরে পত্রিকায় ও? টিভিতে খবরটি দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের সাতজন ইংল্যান্ডের নিউক্যাসেলে থাকে। এ ঘটনা শোনার পর আমি তাদের নিয়ে চিন্তিত। আমার ভয় হচ্ছে, এর পর ব্রিটিশ সরকার সেখানকার বাংলাদেশিদের খারাপ চোখে দেখতে পারে।’
তবে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড কামাল আহমেদ বিবিসিকে বলেন, ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার প্রবণতা দেখা দিলেও সে সমস্যা বাংলাদেশের নয়। এ প্রবণতা ব্রিটিশ সমাজের এবং ব্রিটেনকেই তা মোকাবিলা করতে হবে।
সিরিয়া যেতে প্ররোচিত করে মেয়ে রাজিয়া
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও এলাকার বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল মান্নানের ছোট ভাই আব্দুল লতিফ জানান, গত ১২ মে ফের যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য ঢাকা ছাড়ে আব্দুল মান্নানের পুরো পরিবার। কথা ছিলো তুরস্কে যাত্রাবিরতি নিয়ে সবাই ফিরে যাবেন যুক্তরাজ্যে। তুরস্কে পৌছে বাংলাদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেন তারা। কিন্তু এরপর থেকেই আর কোনো খোঁজ নেই।
অনেকদিন খোঁজ না পেয়ে লন্ডন পুলিশের কাছে ধর্ণা দেন স্বজনরা। ব্রিটিশ পুলিশের বরাত দিয়ে তারা জানান, তুরস্ক থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে ১২ সদস্যের প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবারটি।
আব্দুল লতিফ আরো জানান, এই পরিবারের মেয়ে রাজিয়ায়ই পুরো পরিবারকে সিরিয়ায় যেতে প্ররোচিত করে থাকতে পারেন। রাজিয়ার আচরণে সন্দেহ জেগেছে তার মনেও। বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় রাজিয়া বিদেশে যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছে, তার তথ্য দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ পুলিশকে। সেই সূত্র ধরেই ব্রিটিশ পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত হয়েছে যে, তারা সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন।