সিলেটপোস্টরিপোর্ট:নির্মম নির্যাতন ও পাশবিকতায় খুন হওয়া সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত । ঘোষিত রায়ে ১৩ আসামীর মধ্যে ৪ জনের ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়। অন্যান্যদের মধ্যে ৩ জনকে খালাস ও বাকিদের যাবজ্জীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এ্যাডভোকেট মফুর আলী ।ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন ,সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুুল মালেকের ছেলে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম , জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার (৪৫) , শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মো. জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮) । হত্যাকান্ডের ৪ মাসের মাথায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা আলোচিত এই মামলাটির রায় ঘোষণা করেন রবিবার দুপুরে । দেশে এই প্রথম কোন মামলা দ্রুততম সময়ে নিয়মিত আদালতে রায় হলো ।যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলো ,সিলেট সগর উপজেলার পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০),৭ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হলো : সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুুল মালেকের ছেলে মুহিদ আলম (৩২), তার বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), ছোটভাই পলাতক শামীম আহমদ (২০) ।১ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হলো : সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলী (৪৫) , সিলেট সদর উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০) ।খালাস প্রাপ্তরা হলো : সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলী (৪৫), সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), সিলেট সদর উপজেলার হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেল (২৫)।এর পূর্বে সকাল ১১ টা ২১ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে সিলেটের আদালতে ১১ আসামীকে হাুজির করে এসএমপি পুলিশ । এর পর থেকে ১২০ পৃষ্টার রায় আসামীদের পড়ে শুনানো শেষে এ আদেশ প্রদান করা হয় ।৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। রাজন হত্যার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখে দেশ বিদেশে আলোড়নের সৃষ্টি হয় ।গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন ও হত্যাকান্ডের পর মুহিদ আলমের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুছকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট তা আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ (চার্জ ) গঠন করেন আদালত।হত্যার পর লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগে আদালতের বিচারক মুহিদ আলম, ময়না চৌকিদার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ আনা হয়। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর ৪, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৮ অক্টোবর চলে সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। মামলার মোট সাক্ষী ৩৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।চার্জশিট আমলে নেয়ার পর, ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ।গত ৩১ আগস্ট রাজন হত্যাকান্ডের মূল আসামি পলাতক কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদিতে পলাতক কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।এবং কামরুলের পক্ষে ৫৪০ ধারার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ বিচারক সহ ১১ স্বাক্ষিকে জেরা করেন তার নিয়োজিত আইনজীবীরা । পরবর্তীতে ২৫ ও ২৭ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক শেষে ৮ নভেম্বর মামলার রায়ের তারিখে ঘোষণা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা ।রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন রাজনের পিতা শেখ আজিজুল ইসলাম আলম । তিনিসিলেটপোস্ট কে বলেন আদালতে ন্যায় বিচার পেয়েছেন ।কামরুলের পক্ষের ও সাজা প্রাপ্ত অন্যান্য আসামীর আইনজীবীরা সিলেটপোস্ট কে জানান, রায় আসামীদের বিপক্ষে চলে গেছে । ফলে তার আসামীরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন ।সিলেট জেলাবারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্ম্দ লালা জানান, রাজন হত্যাকান্ড একটি নির্মম ঘটনা যা দেখলে যে কারো ঘা শিউরে উঠে । তাই এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের প্রতি আদালত সঠিক বিচার করেছেন ।সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মফুর আলী নিউজ সর্বশেষকে জানান, রাজন হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম আাদলত দ্রুত সময়ে শেষ করেছেন । এবং রাজনের পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছেন ।
সিলেটের আলুচিত ঘটনা রাজন হত্যায় ৪ জনের ফাঁসি,৬ যাবজ্জীবন সহ বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড : খালাস ৩
সিলেট পোস্ট ২৪ ডট কম
: নভেম্বর ৮, ২০১৫ | ৬:০১ অপরাহ্ন
« « পূর্ববর্তী
পরবর্তী » »