সিলেটপোস্টরিপোর্ট:এক বছর পার হয়ে গেলেও হয়নি স্কুলছাত্রী মনি হত্যা মামলার বিচার। থানা থেকে আদালতে দৌড়াচ্ছে মনির পরিবার। মুছে ফেলা হয়েছে আলামত। অনেকটা কচ্ছব গতিতে চলছে মামলা।২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর ‘আত্মহত্যা’ করে জেএসসি পরীক্ষার্থী লক্ষি রানি সরকার মনি। সে আউলিয়াবাদ আর কে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তো। মনি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আদাঐর ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের হীরা লাল সরকারের মেয়ে। একই গ্রামের সুখলাল সরকারের ছেলে শ্রীবাস সরকারের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে মনি ‘আত্নহত্যা’ করেছে বলে তার পরিবারের দাবি।মনির মা শুভা রানী সরকার বাদী হয়ে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যালে শ্রীবাস সরকার ও তার পিতা সুখলাল সরকারকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলার প্রথম তদন্ত করেন থানার তৎকালীন এসআই লিটন ঘোষ। লিটন ঘোষ মামলাটির আলামত সংগ্রহ, তথ্য প্রমাণ ও স্বাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে মামলাটি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেলে অদৃশ্য কারণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশে মামলার তদন্ত থেকে এসআই লিটন ঘোষকে সরিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় থানার ‘বিতর্কিত’ এসআই মমিনুল ইসলামকে। এসআই মুমিন মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দেন। এসআই মুমিন তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন লক্ষি রানি সরকার মনি ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর জেএসসি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে বাদিনীর মেয়ে বাড়িতে গিয়ে মন খারাপ করে বসে থাকে। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কোন কথাবার্তা বলেনি। ওইদিন সন্ধ্যায় মনি নিজেই বাড়ির সবার অগোচরে বিষপান করে। পরে বাড়ির লোকজন মনিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাবার পথে বিষক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে মনি মৃত্যুবরণ করে। তারপর মনির মা শুভা রানি সরকার বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। বাংলাদেশ পুলিশ সিআইডি চট্টগ্রামের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক মো. নজরুল ইসলাম ও হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহসিন করিম ভিকটিমের মৃত্যু সংক্রান্ত কলামে লেখেন (considering the post mortem report and the chemical analysis report the board is in the opinion that the case of death was organo phosphorus poisoning which was anti mortom and suicidal in nature)। যার অর্থ লক্ষি রানী সরকার মনি কীটনাশক পান করে মৃত্যুবরণ করেছে।সাক্ষী প্রমাণ ও ঘটনার পারিপাশ্বিক অবস্থাদৃষ্টে বাদীনির আনিত অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এই তদন্ত প্রতিবেদন দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ভিসেরা রিপোর্টে প্রমানিত হয়েছে যে লক্ষি রানি সরকার মনি বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে। তাহলে লক্ষি রানি সরকার মনি কার কারনে আত্মহত্যা করেছে , আত্মহত্যার পিছনে কার হাত রয়েছে এই বিষয় গুলো কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, শ্রীবাস ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তাই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন এমনভাবে দেয়া হয়েছে।এইভাবে রাজনৈতিক প্রভাব আর টাকার কারণে যদি প্রকৃত আসামিরা ছাড় পেয়ে যায় তাহলে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে যাবে।দারোগার তদন্ত প্রতিবেদনের পর বাদীনী শুভা রানি সরকার হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজীর আবেদন করেছেন। নারাজীতে বাদীনী উল্লেখ করেন তার মেয়ে লক্ষি রানি সরকারকে যৌন হয়রানি করার প্রেক্ষিতে মান সম্মান নষ্ট হওয়ায় এবং ১ নং আসামির প্ররোচণায় তার মেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য প্রদান করা সত্ত্বেও তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই প্রতিবেদন দিয়েছে।অপরদিকে মামলার ১ নং সাক্ষী মতি লাল সরকার, ৬ নং সাক্ষী খিলগাঁও গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জগদীশ সরকার, ২ নং সাক্ষী নেহার লাল সরকার হবিগঞ্জ নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এফিডেভিট করে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শ্রীবাস সরকার লক্ষি রানি সরকার মনিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এই ঘটনায় লক্ষি রানি সরকার মনি লজ্জায় ও ঘৃণায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করে। বর্তমানে মামলাটি ডিবি পুলিশের এসআই ইকবাল বাহার তদন্ত করছেন।মনির মা শুভা রানি সরকার জানান, মামলার সাক্ষী আছে, ঘটনার সত্যতা আছে কিন্তু তারপরেও বিচার পাচিছ না। যাদের শক্তি আছে। তাদের সঙ্গে সবাই আছে। আমাদের শক্তি নেই। তাই আমাদের পক্ষে কেউ নেই। এখন ঈশ্বরের কাছেই বিচার চাই।থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুমিনুল ইসলাম জানান, তিনি তদন্ত করে যা পেয়েছেন তা প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে কী কারণে লক্ষি রানি সরকার মনি বিষপান করেছেন তা উল্লেখ করেননি কেন জানতে চাইলে- তিনি বলেন আইনের অনেক ধারা রয়েছে। এগুলো বুঝে কাজ করতে হয়।হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই মামলার বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তা ইকবাল বাহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
হবিগঞ্জের স্কুলছাত্রী মনি হত্যার বিচার এক বছরেও হয়নি
সিলেট পোস্ট ২৪ ডট কম
: নভেম্বর ২০, ২০১৫ | ৫:০১ অপরাহ্ন
« « পূর্ববর্তী
পরবর্তী » »