সিলেটপোস্ট রিপোর্ট :সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্কুল পড়ুয়া ভাই হত্যার বর্ণনা দিলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুরের বনগাঁও ইউনিয়নের বাতির আলীর ছেলে ফজলুল হক কাঁচা। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘হাতজোড় করেও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে ভাইকে বাঁচাতে পারেননি ফজলুল হক কাঁচা। করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। সন্তানকে বাঁচাতে সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরেছেন তার মা। কিন্তু সন্ত্রাসীরা জেএসসি পরিক্ষার ফল প্রত্যাশী হেলাল উদ্দিনকে (১৪) বাঁচতে দেয়নি। মাটিতে ফেলে লাথি, কিল-ঘুষি মেরে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে।’’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছোট ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে করজোড়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলেন তার মা খুশিদুন নেছাও। কিন্তু সন্ত্রাসীরা প্রাণ ভিক্ষার বদলে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে জ্ঞান হারান হেলাল। হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।চোখের সামনে ভাইকে হত্যার বর্ননা দিতে গিয়ে অশ্রু সংবরণ করে রাখতে পারেননি ফজলুল হক। তিনি জানান, একই গ্রামের সাবুল, মানিক, শফিক মোল্লাগংদের সঙ্গে ৩ বছর ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গ্রাম্য সালিসে বহু বার বিচার হয়েছে। বিচারে জামানতের নামে টাকা জমা দিলেও খোয়া গেছে।
এরই জের ধরে ২১ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টায় শফিক মোল্লার নেতৃত্বে সিরাজ মাওলানা, ডা. আব্দুন নূর, আলতা মিয়া ও বিলাল আহমদের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসী সাবুল গংদের হয়ে দেশিয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায় দাবি করে ফজুলর হক বলেন, হামলাকারীরা বাড়িতে ঢোকার পথে তার মাকে পেয়ে মারপিঠ করে চুল ধরে টেনে হিচড়ে লাথি, ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে বসত ঘর ভাঙচুর ও আসবাবপত্র চুর্নবিচুর্ণ করে। লুটপাট করে নেয় বাড়ির মালামাল, ৭টি গবাদিপশু। এমন সময় অস্টম শ্রেনীর ছাত্র হেলাল উদ্দিনকে মাটিতে ফেলে মারে সন্ত্রাসীরা। এক পর্যায়ে তাকে বাঁচাতে ক্ষমা চান ফজলু ও তার মা। কিন্তু তাদের আর্তিতে মন গলেনি হামলাকারীদের। কাঠের টুকরো ও লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। হতবিহবল অবস্থায় পরিবারের সকলের ওপর নির্দয় হামলা করে। এতে ফজলুল হক, তার ওপর দুই ভাই আলাল-দুলাল, বাবা বাছির আলী ও মা খুশিদুন আহত হন। তাদের সকলের দেহে অস্ত্রপচার হয়েছে। জখমী মাথায় লেগেছে অসংখ্য সেলাই।ঘটনার দিন হামলাকারী সন্ত্রাসীরা থানায় খবর দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তিতে ফেলে ফজলু ও তার দুই ভাই এবং তাদের বাবাকে গুরুতর আহতাবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ফজলুল হক ও তার বাবাকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের দুজনের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তার অপর দুই ভাই আলাল-দুলাল এখনও পুলিশী হেফাজতে চিকিৎসাধীন জানান ফজলু। আর ভাইয়ে হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় আব্দুল কাইয়ুম ও মন্নানকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকিরা রয়েছেন অধরা।আর গোটা পরিবার হত্যা মামলার বাদি হয়ে আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পূণরায় আক্রান্ত হতে পারেন এবং হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে এক অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে প্রশাসনসহ সকল মহলের সহায়তা কামনা করেছেন ফজলুল হক।