সিলেটপোষ্ট রিপোর্ট :ঢাকাই চলচ্চিত্রের বহুল আলোচিত সিনেমা রানা প্লাজা। প্রেক্ষাগৃহে আর কখনো প্রদর্শিত হবে না এটি। নানা চড়াই উতরাইয়ের পর এ সিনেমাটিকে সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করেছে সরকার। আজ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
শামীমা আক্তার প্রযোজিত রানা প্লাজা পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা চলচ্চিত্র বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক জনসম্মুখে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে বিবেচিত হওয়ায় চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন, ১৯৬৩ অনুযায়ী বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটি সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করা হয়েছে।
সেন্সর সনদপত্রবিহীন রানা প্লাজা দেশের কোথাও প্রদর্শিত হলে চলচ্চিত্রটি বাজেয়াপ্তসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা নামে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ে। এই ঘটনার ১৭ দিন পর ১০ মে ধ্বংসস্তূপ থেকে রেশমা নামের এক মেয়েকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে নির্মাতা নজরুল ইসলাম খান তৈরি করেন এ চলচ্চিত্রটি। এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইমন সাদিক ও পরীমনি।এতে পোশাকশ্রমিক ‘রেশমা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন পরীমনি। তার বিপরীতে আছেন সাইমন সাদিক।
রানা প্লাজা সিনেমাটি গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রানা প্লাজা প্রদর্শনে উচ্চ আদালত ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সিনেমাটির মুক্তি বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রযোজক আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করলে, ৬ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে দেন। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির
প্রযোজকের পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন। রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন। এতে সিনেমাটির মুক্তিতে আর কোনো বাধা থাকে না।
তারপর গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল এ সিনেমাটি। কিন্তু পরবর্তিতে তাও বন্ধ হয়ে যায়।
নানা জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন সেন্সর বোর্ডে আটকে ছিল সিনেমাটি। বেশ কিছু দৃশ্য, রানা প্লাজা ধসের চিত্রায়ণ প্রভৃতি নিয়ে আপত্তি তোলে সেন্সর বোর্ড। এরপর সিনেমাটির সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। অবশেষে কিছু দৃশ্য সংশোধনের পর ১১ জুন সিনেমাটিকে ছাড়পত্র দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। রানা প্লাজা চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য ২ ঘণ্টা ১৭ মিনিট ১৬ সেকেন্ড।
সিনেমাটির গল্পে দেখা যাবে, গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রেশমাকে ভালোবাসে তার প্রতিবেশী টিটু। কিন্তু টিটু তাদের চেয়ে অবস্থাপন্ন বলে তার প্রস্তাবে সায় দেয় না রেশমা। টিটুও হাল ছাড়ার পাত্র নয়। এক দুর্ঘটনা থেকে টিটু রেশমাকে উদ্ধার করে।
এরপর টিটুকে ভালো লাগতে শুরু করে রেশমার। সায় দেয় তার প্রেমে। এর কিছুদিন পর বিয়ে করে টিটু ও রেশমা। তারা ঢাকায় চলে আসে। তখন এক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে টিটু। পরিবারের দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়ে রেশমা যোগ দেয় এক গার্মেন্টসে। এ নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ঘটে রানা প্লাজার দুর্ঘটনা।
সাইমন-পরীমনি ছাড়াও এতে অভিনয় করেন আবুল হায়াত, সাদেক বাচ্চু, কাবিলা, রেহানা জলি, শিরিন আলম, শিউলী আকতার, হাবিব খান প্রমুখ। পরিচালক নজরুল ইসলাম খানের কাহিনি ও চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মিত এ সিনেমার সংলাপ লিখেছেন মুজতবা সউদ। চিত্রগ্রহণ করেছেন এম এইচ স্বপন।