উজ্জ্বল দাশ,ওসমানীনগর::ভারপ্রাপ্ততেই ভারাক্রান্ত ওসমানীনগর উপজেলা শিক্ষা খাত। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পদ থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে ভারপ্রাপ্তদের। নব-সৃষ্ট এই উপজেলা শিক্ষা অফিসে জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।
২০১৪ সালের ২ জুন পূর্ণাঙ্গভাবে ওসমানীনগর উপজেলা ঘোষণা করা হয়। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলেও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল কার্যক্রম বালাগঞ্জ উপজেলার অধীনে পরিচালিত হয়। পাঁচ বছর পর ওসমানীনগর উপজেলায় শিক্ষা অফিসের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু হয়। মাত্র দেড় বছরে ওসমানীনগরে তিনজন শিক্ষা কর্মকর্তা পদায়িত এবং বদলি হন। সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ামত শরিফ। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দিয়ে চলছে ওসমানীনগর উপজেলার শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন ৬০ জন। চলতি দায়িত্ব দিয়ে চলছে ৩৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রাধান শিক্ষক। এসব বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকই চালাচ্ছেন দাপ্তরিক কার্যক্রম। সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য ৫০টি। বিগত শিক্ষক নিয়োগে ২৮ জন নতুন শিক্ষক পদায়ন হলেও যোগদান করেননি ২ জন। ৫৭টি বিদ্যালয়ে নেই দপ্তরি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জনবল ৭ জন থাকার কথা। কিন্তু পদায়ন হয়েছে মাত্র ৩ জনের। উচ্চমান সহকারী, হিসাব সহকারী, কম্পিউটার অপারেটর পদ শূন্য। পুরো উপজেলার দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র দুজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহায়ক। তার মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার। ফলে ৫টি ক্লাস্টারে দায়িত্বে রয়েছেন একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। জনবল সংকটের বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে জানানো হলেও অদ্যাবধি সংকট নিরসন হয়নি। জনবল সংকটে ঠিকমতো প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করা যাচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সময়মতো উপস্থিতি, শিক্ষার্থীদের পাঠদান, মনিটরিংয়ের দায়িত্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসের থাকলেও পদ শূন্য থাকায় সার্বিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ছে। দাপ্তরিক নানা কার্যক্রম ও সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পর বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় থাকছে না কর্মকর্তাদের। সব মিলিয়ে জনবল সংকটে উপজেলার সার্বিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিগত বন্যায় উপজেলার প্রায় ৬৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিক বিদ্যালয় ভবনে দেখা দেয় ফাটল। কিন্তু বন্যাপরবর্তী সাত মাস অতিবাহিত হলেও ক্ষতিগ্রস্ত কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার হয়নি।
ওসমানীনগর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা দ্বিলিপময় দাশ বলেন, জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। নতুন উপজেলা হওয়ায় ধীরে ধীরে সংকট নিরসন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলে বিদ্যালয়গুলোতে সংস্কার কাজ করানো হবে।