সংবাদ শিরোনাম
ছাতকে বাস-সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে কন্ঠশিল্পী পাগল হাসান নিহত  » «   সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে মায়ের সম্পত্তি নিয়ে ছোটভাইয়ের হাতে বড়ভাই নিহত,আটক-২  » «   দিরাইয়ে বজ্রপাতে দুইজন কৃষকের মৃত্যু  » «   পরিবেশ অধিদপ্তরের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহবান  » «   সিলেট জেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভা  » «   ঈদের শুভেচ্ছা জানালেন মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র সভাপতি শেখ লুৎফুর  » «   পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ  » «   মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি’র ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত  » «   সুনামগঞ্জে কালবৈশাখীর ঝড়ে ৭শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি,২ শতাধিক দোকান লন্ডভন্ড  » «   হবিগঞ্জে চাল্যকর ছোবহান হত্যা মামলার ৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯  » «   নবীগঞ্জে ৬ বছরে শিশুকে চকলেটের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ! ধর্ষনকারী আনহারকে আটক   » «   ফ্যাসিস্ট ডামি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে :কাইয়ুম চৌধুরী  » «   বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সিলেট জেলার উদ্যোগে ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল  » «   সিলেটে পারিবারিক কলহের জেরে ছেলের হাতে বাবা খুন  » «   সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার  » «  

ঈদ পর্যটন : সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন ৪০ লাখ

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে ঢল নামে পর্যটকদের। ছবি- মো. ফজলু মিয়া।

সিলেটপোস্ট ডেস্ক :: পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে সারা দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ঢল নেমেছিল। ছুটি শেষ হয়ে গেলেও কক্সবাজার, রাঙামাটি, সিলেট, কুয়াকাটাসহ দেশের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে থামেনি পর্যটকের আনাগোনা। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে পর্যটকরা ঘুরছেন মনের আনন্দে। তাদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণ করেছেন। আশানুরূপ ব্যবসা হওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। পুরো রমজানে কোনো ব্যবসা হয়নি। এবার তা পুষিয়ে উঠছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সেক্রেটারি আবদুস সালাম আরেফ জানান, এবার ঈদের ছুটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এবার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছে। তবে রাঙামাটিতে পর্যটক কম হয়েছে।

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় জলপ্রপাত ও ইকোপার্কে পর্যটকের ঢল নেমেছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সড়ক সেতু শেখ হাসিনা ধরলা সেতুতে ঢল নেমেছে মানুষের। সিলেটের গোলাপগঞ্জে আনারস বাগান আলভিনা গার্ডেন ও ড্রিমল্যান্ড বিনোদন পার্ক, জয়পুরহাটের শিশু উদ্যান ও জেলা ডিসি পার্ক, পাঁচবিবির পৌর পার্ক, লকমার প্রাচীন জমিদার বাড়ি, আটাপাড়া ব্রিজ ও তুলসীগঙ্গা নদী তীরবর্তী-পাথরঘাটা, ক্ষেতলালের বিলের ঘাট ও আছরাঙ্গা দীঘি, কালাইয়ের নান্দাইল দীঘি এবং আক্কেলপুরের হলহলিয়া ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমেছে। মাদারীপুরে শকুনী লেকেরপাড়, ওয়াচ টাউয়ার, শিবচর রবীন্দ্র সরোবর কেন্দ্র, আদর্শ মসজিদ, রাজৈরের টেকেরহাট মোল্লা কমপ্লেক্স ও খালিয়া শান্তি কেন্দ্রে আছমত আলী খান সেতু, মাদারীপুর সদরের মস্তফাপুর উদ্যান, চরমুগরিয়ার বানরের অভয়ারণ্য, ইকোপার্ক, মেরিন একাডেমি, আড়িয়াল খাঁ নদের ওয়াকওয়ে, নতুন বিসিক শিল্প নগরীতে দর্শনার্থীরা ভিড় করেছেন। রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর চরে বিনোদনের জন্য প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ। রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা রেলওয়ে ও সড়ক সেতুকে বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহি হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জিসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যেন পা ফেলার ঠাঁই নেই। পটুয়াখালীর দুমকিতে দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন লেবুখালী পায়রা সেতু। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর, বাহারেরঘাট ব্রিজ ও নির্মাণাধীন হরিপুর-চিলমারী সেতু এলাকায় বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে। হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা অভয়ারণ্য, গ্রিনল্যান্ড পার্ক ও উপজেলার চা বাগানগুলোতেও ভিড় করছেন পর্যটকরা। ভোলার চরফ্যাশনে নজরুল নগর, কলমী, বকসী, বাবুরহাট, মায়াব্রিজ, খামার ভাড়ি, চরকুকরিমুকরি, ঢালচরের তারুয়া এলাকায় পর্যটকের ঢল নেমেছে।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত : রমজান মাসে এ পর্যটন নগরী প্রায় পর্যটকশূন্য ছিল। তবে ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামে। লাখো পর্যটকের আগমনে চিরচেনা রূপ ফিরে পায় সৈকতের সবকটি পয়েন্টসহ পর্যটন স্পট। এবার ঈদ মৌসুমে আশানুরূপ পর্যটক আগমনে দারুণ খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, পুরো রমজানে কোনো ব্যবসা হয়নি। এবার তা পুষিয়ে উঠছে। ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে ২ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটেছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের রুম পরিপূর্ণ ছিল। এখন পর্যটক কিছুটা কমেছে। কক্সবাজার হোটেল কল্লোলের অপারেশন ম্যানেজার মো. ওমর চিশতী জানান, ঈদের ছুটিতে হোটেল পর্যটকে পরিপূর্ণ ছিল। প্রচ- ব্যস্ত সময় কেটেছে। এখন পর্যটক কিছুটা কমেছে। আশা করছি সবার ভালো ব্যবসা হয়েছে।

কুয়াকাটা সৈকত : ঈদের ছুটিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা ছিল পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। এক মাস পর্যটক খরায় ভুগলেও তা কাটিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীরা। সৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের পর পর্যটকরা ছুটে যান রাখাইন পল্লীতে। এশিয়ার সর্ববৃহৎ সীমা বৌদ্ধবিহার, ইকোপার্ক, লেম্বুরচর, শুঁটকিপল্লী, ইলিশপার্কসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানেও পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে। আবাসিক হোটেল ওশান ভিউর অপারেশন ম্যানেজার আল আমিন খান উজ্জল বলেন, রমজান মৌসুমে আমরা অলস সময় পার করেছি, এখন ব্যস্ত সময় পার করছি।

রাঙামাটি : এবার ঈদের ছুটিতে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছেন বহু পর্যটক। সাজেকে হোটেল-রিসোর্টগুলোতে রয়েছে শতভাগ বুকিং। বিপরীতে রাঙামাটি শহরের ৫০-৬০ শতাংশ বুকিং হয়েছে।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনউদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন, এবার ঈদে আবাসিক হোটেলগুলোতে ৪০ শতাংশ ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যাশার চেয়ে কম এসেছেন পর্যটক।

সুন্দরবন : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভয় ও শিহরণের স্থান সুন্দরবন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের মন কাড়ে সবুজের সমারোহে। প্রকৃতির এই অপরূপ রাজকন্যা সুন্দরবনের যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই যেন সুন্দরের আগুন। তাই তো বরাবরের মতো ঈদের ছুটিতে এবারও পর্যটকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন জীব-বৈচিত্র্যের এই বনে।

করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ওসি হাওলাদার আজাদ কবির ব‌লেন, প্রতিদিন শত শত পর্যটক আসছেন। তারা এখানে হরিণ, বানর, কুমিরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীসহ বনের বিভিন্ন স্থানে অবলোকন করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন বনের জীব-বৈচিত্র্য দেখে। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা বেশি হতে পারে। এ ছাড়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে করমজলে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো আকর্ষণীয় করে সুন্দরবনের স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান : ঈদের ছুটি শেষ হলেও হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ঢল এখনও শেষ হয়নি। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্রমণপ্রিয় মানুষ আসা-যাওয়া থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, ঈদের দিন থেকে এখানে পর্যটকদের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত এই ভিড় থাকবে বলে মনে হচ্ছে।

ফেনীর পর্যটন স্পট : পর্যটকদের উচ্ছ্বাসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ফেনীর বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলো। ঈদের দিন বিকাল থেকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত সোনাগাজীর কয়েকটি পর্যটন স্পটে হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পালা করে নিয়োজিত রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, পর্যটন স্পটগুলো ঢেলে সাজাতে ও বিনোদনপ্রেমীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে আরও প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া ফেনী শহরের কাজিরবাগস্থ ইকোপার্ক ও রাজাঝি দীঘিস্থ শিশুপার্ক এবং বিজয় সিংহ দীঘি ও ছাগলনাইয়ার বাশেরকেল্লায় ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা দিছে।

কুমিল্লার বিনোদনকেন্দ্র : ঈদের আনন্দে উদ্বেলিত ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমিয়েছে কুমিল্লার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। পরিবারের ছোট-বড় সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন কুমিল্লাবাসীরা।

প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর কুমিল্লা জোনের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান জানান, সাধারণত ঈদের দিন আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো বন্ধ থাকে। কিন্তু এ বছর আমরা ভ্রমণপিপাসুদের কথা চিন্তা করে শুধু শালবন বিহারটি খোলা রেখেছিলাম। আর ওইদিন তিন লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা শালবন বিহারের ইতিহাসে এক দিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এখন গড়ে প্রতিদিন ১৫ হাজারেরও বেশি দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.