শেখ লুৎফুর রহমান :: সিলেটে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জনও বেশি। মাঠের পাকা-আধাপাকা সোনালী ধানের দুলুনি আনন্দের বদলে শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে কৃষকের মনে। গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় ফসলহানি আর আগের দুবছরে করোনা সংক্রমনের কারণে ফসল গোলায় ওঠেনি। এবার বন্যা ও করোনা না থাকলে প্রকৃতির বৈরি আচরণে কৃষকরা আতঙ্কিত। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে সিলেট জেলার ৫০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। বৃষ্টি না থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে যাবে। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী কয়েকদিন বজ্রসহ কালবৈশাখীর পূর্বাভাস দিয়েছে।
টানা দুই বছর ক্ষতির পর এবার বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকরা অনেকটা উদ্বেলিত। কষ্টার্জিত উৎপাদন ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছেন না তারা। প্রচন্ড তাপদাহের পর ঈদের ২/৩দিন আগ থেকে সিলেটে বৃষ্টি নামে। কখনো কালবৈশাখীর তান্ডব, সাথে শিলাবৃষ্টি আর কখনো অঝোর ধারার বর্ষণ নষ্ট করছে হাওড়ের সোনালী ধান। ঈদের আগে প্রচন্ড কালবৈশাখী আর শিলাবৃষ্টিতে হাকালুকি হাওড় সংলগ্ন ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার উপজেলার বোরো ধানের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে তা সামগ্রিক আবাদের তুলনায় খুব একটা বেশি নয় বলে দাবি- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের।
বিয়ানীবাজারের কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন আগে শিলাবৃষ্টিতে আমাদের ১১ কিয়ার (১ কিয়ার=১০০ শতক) জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর বন্যায় সমপরিমাণ জমির ধান তলিয়ে যায়। এবছরও ধান হারিয়েছি। শুধু আমরা না, হাকালুকিপারের অনেকের পাকা ধান শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেঞ্চুগঞ্জের কৃষক জামাল মিয়া বলেন, শিলাবৃষ্টিতে ধানের বেশ ক্ষতি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাগাদাও আছে দ্রুত ধান কেটে নেওয়ার। যেগুলো বেচেছে পাকা আধাপাকা মিলিয়ে দ্রুত কেটে নিচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেটের উপপরিচালক (শস্য) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সিলেটে এবার ৮৪ হাজার ৪৫০ হেক্টর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এবার ৮৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। প্রকৃতির বৈরিতার কারণে আমরা কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে (বুধবার, ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত) ৫০ শতাংশ জমির বোরো ধান কাটা হয়েছে। হাওড় এলাকায় মোট আবাদের ৬৭ শতাংশ এবং হাওড় ছাড়া অন্য এলাকায় মোট আবাদের ৩৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে।
ঝড়বৃষ্টি না থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। ফলে নির্বিঘেœ কৃষকরা ধান কাটতে পারবেন।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কথার সাথে আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায় নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী এ সপ্তাহে সিলেট অঞ্চলে বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. সজিব হোসাইন বলেন, আগামী কয়েকদিন সিলেটে কালবৈশাখী ও ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, হাওড়ে নামার আগে কৃষকরা পূর্বাভাস আবহাওয়া অফিস থেকে জেনে নিতে পারেন। আকাশে কালোমেঘ দেখলে বজ্রপাতের পূর্বাভাসও ধরে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেলে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে দ্রুত পাকা ধান কাটতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
প্রকৃতির বৈরিতার আশঙ্কায় সিলেটের বিভিন্ন হাোড় থেকে দ্রুত বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা। সম্প্রতি ছবিটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে তুলেছেন এনামুল হক।