সিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিলেট নগরীতে তিন দশকে ৫০ ভাগ টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলসহ নগরীর অপরূপ সৌন্দর্য্য পাহাড়-টিলা অনেকগুলো ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে। আবার অনেকগুলো ধংসের দ্বারপ্রান্তে।
সিলেট অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি উপজেলা ও নগরীতে পাহাড়-টিলা ধংসের চিত্র দেখতে পাওয়া যায়।
জানা যায়, সম্প্রতি সিলেট নগরীর মিরাপাড়ায় ও বালুচর এলাকাায় টিলা কাটার সময় পুলিশ অভিযান চালায়। টের পেয়ে টিলা কাটার সাথে জড়িত দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞগণ পাগাড়-টিলাকে ‘ভূমির খুঁটি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। ধংস করা হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বিশেষ করে, সিলেট অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য্যম-িত পাহাড়-টিলা অনেকগুলো ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে। আবার অনেকগুলো ধংসের দ্বারপ্রান্তে। সিলেট বিভাগের সর্বত্র চোখে পড়ে সবুজে ঢাকা পাহাড়-টিলা হয়ে গেছে লাল। কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। তাই বেরিয়ে পড়েছে লাল মাটি। এর ফলে বাড়ছে টিলাধস। জরিপের তথ্য হচ্ছে, সিলেটের শতকরা ১১ ভাগ ভূমি পাহাড়। এর মধ্যে প্রায় ১৮ ভাগ উঁচু ভূমি। এখানে রয়েছে ৬৬ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল। এর মধ্যে শতকরা ২৩ ভাগ পাহাড় ও টিলার ওপর অবস্থিত।
সিলেট অঞ্চলে ১৯৯৭ সালে ছিলো ৩৮ হাজার ২৭৭ হেক্টর পাহাড়ি অঞ্চল। এরই মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার বনাঞ্চল উজাড় করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, গত দেড় দশকে সিলেটের ৬১টি টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। জেলার ৪১২টি পাহাড়-টিলার মধ্যে এখন টিকে আছে মাত্র ৩৫১টি। সরকারি হিসাবে ধংস হওয়া টিলার সংখ্যা ৬১টি।
আর বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি শতাধিক টিলা নিশ্চিহ্ন হয়েছে গত দেড় দশকে। পরিবেশ বিষয়ক আরেকটি সংগঠনের দাবি, গত তিন দশকে সিলেট নগরীর ৫০ ভাগ টিলা ধ্বংস করা হয়েছে। অথচ আইন অনুযায়ি পাহাড়-টিলা কাটা নিষেধ।
আইনে বলা হয়, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় বা দখলে বা ব্যক্তিমালিকানায় পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোন পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যেতে পারে।
সিলেটে টিলা কাটা চলে দিনদুপুরে। কেউ টিলা কেটে বিক্রি করছেন মাটি, আবার কেউ মাটির বিনিময়ে অনুমতি দিচ্ছেন টিলা কাটার অনুমতি। পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশের অভিযান হলে টিলা কাটার দায়ে আটক হন শ্রমিক। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান টিলার মালিক ও মাটি কাটার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার। আর কোনো কোনো স্থানে টিলার মালিককে জরিমানা করা হলেও তাতে দমে থাকেন না মালিক। জরিমানার টাকা দিয়ে ফের শুরু করেন টিলা কাটা। দেদারছে টিলাকাটার ফরে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।