সিলেটপোস্ট ডেস্ক::সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আলোচিত ব্রাদার ইসরাইল আলী সাদেক জামিন নিতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছে। জামিন নামঞ্জুর করে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছেন। দুর্নীতির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পলাতক ছিল সাদেক। পরে সে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিল। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স সাদেক। সে হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদকও। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল একাই নিয়ন্ত্রণ করতো সাদেক। হাসপাতালে সিন্ডিকেট গড়ে ঘুষ দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। দীর্ঘদিন সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন হাসপাতালের এক মহিলা স্টাফ নার্স। পরে শাস্তি থেকে ফিরে ওই নার্স কাজে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে বরখাস্ত থাকাকালীন সময়ের বেতন ভাতা তুলতে সাহায্য করে সাদেক ও তার চক্রের সদস্যরা। একপর্যায়ে সহযোগিতার বিনিময়ে ওই মহিলা স্টাফ নার্সের কাছে ১০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। গত ৯ই জানুয়ারি ছিল ঘুষের টাকা লেনদেনের দিন। ওইদিন সকালে সাদেক তার চক্রের সদস্য আমিনুলকে টাকা আনতে জরুরি বিভাগের কাছে পাঠায়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি টিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে টাকাসহ আমিনুলকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় হাসপাতাল থেকে সাদেক পালিয়ে যায়। ঘুষের টাকাসহ আটক হওয়া স্টাফ নার্স আমিনুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় আরেক স্টাফ নার্স সুমনকে। এ ব্যাপারে ঘটনার দিন রাতেই হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ বাদী হয়ে সাদেককে প্রধান আসামি করে তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হচ্ছে- ঘুষের টাকাসহ আটক হওয়া ব্রাদার আমিনুল ও সুমন। এদিকে সাদেক পলাতক ছিল। তাকে ধরতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালালেও খুঁজে পায়নি।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন- ইসরাইল আলী সাদেক গত ২৩শে জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন পায়। উচ্চ আদালত তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আসামি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহ মশাহিদ আলী জানিয়েছেন- উচ্চ আদালতের নির্দেশনামতো গতকাল সকালে ইসরাইল আলী সাদেক সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক নুরে আলম ভূঁইয়ার আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করে। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) আশরাফউল্লা তাহের জানিয়েছেন- জামিন মঞ্জুর করার পর সাদেককে আদালতের নির্দেশমতো কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় তিন জন আসামি ছিলেন। সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ব্রাদার সুমন কয়েকদিন আগে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই রাশেদ ফজল।
তিনি জানান- বর্তমানে দু’জন আসামি কারাগারে রয়েছে। মামলার তদন্ত শেষ হলে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়া হবে। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে- ওসমানী হাসপাতালে সাদেকের দুর্নীতির শেষ ছিল। হাসপাতালের ট্রলিবয় থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছিলেন তার সিন্ডিকেটের সদস্য। হাসপাতালের প্রশাসনিক শাখায় হাসপাতালের নার্সদের বসিয়ে রেখে সে কাজ করাতো। বিগত কয়েক বছরে হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে অর্ধশতাধিক নার্স প্রবাসে আছেন। তাদের নামে বেতন ভাতা তুলে আত্মসাৎ করা হতো। আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগের নামে সাদেক দুই হাতে টাকা কামিয়েছে। এ ছাড়া নার্সদের ছুটি, বদলি, পদোন্নতিসহ নানা খাতে সে টাকা নিতো। টাকা দিলে কাজ হতো, নতুবা হতো না। তার দাপটের কাছে অসহায় ছিলেন হাসপাতালের নার্সরাও। তার ব্যাপারে বার বার নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। বরং অভিযোগকারী নার্সরা হাসপাতালের অভ্যন্তরে তার হাতে নানাভাবে অপমানিত ও নির্যাতিত হয়েছেন। বিগত ৫ বছর সাদেক নিজেকে সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছের লোক বলে পরিচয় দিতো। ৭ই জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সাদেকের নেতৃত্বে ২ শতাধিক নার্স নগরের দুর্গাকুমার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসে ‘ডামি’ ভোটার হিসেবে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তীতে এ ঘটনা নিয়ে সিলেটে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় বিব্রত হন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারাও। তারা ভোটের দিনই ঘটনার জন্য সাদেককে তিরস্কার করেছিলেন।