সিলেটপোস্ট ডেস্ক::নিজের পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছিলেন এক আওয়ামী লীগ নেতার। কিন্তু তিনি নিজেই সেই সম্পত্তি আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের ফতেহগঞ্জ গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে মো. রাসেল রবি (৩৫)। এ কাজে ওই আওয়ামী লীগ নেতা পুলিশকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ তার।
আজ মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রাসেল রবি জানান, তার বাবা নূর উদ্দিন প্রবাসে থাকায় আত্মীয়-স্বজন মৌরসি সম্পত্তি দখল করেছিলেন। ২০০৫ সালে তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কানাইঘাট উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা তাদের মালিকানাধিন জমি খাস হিসাবে ঘোষণা ও প্রতিপক্ষকে দখলচ্যুত করেন। তবে তারা ২০০৬ সালে আবারও তা দখল করেন। ২০১১ সালে সম্পত্তি উদ্ধারে তার পিতা নূর উদ্দিন গোলাপগঞ্জের বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সামাদকে আমমোক্তার নিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি প্রতিপক্ষের সাথে মিলে হুমকি ধমকি দিয়ে সম্পত্তির দাবি ত্যাগে চাপ সৃষ্টি করেন। সফল না হয়ে একে একে ৮টি মামলা দায়ের করিয়ে হয়রানি করেন। এসব মামলায় রসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্দোষ প্রমাণিত হন। সম্পত্তি উদ্ধারে তার দায়েরকৃত স্বত্ত্ব মামলাটি (২৮/২১) এখনো বিচারাধিন। এদিকে আমমোক্তার দলিলের শর্ত ভঙ্গ করে সামাদ, তার ভাই আব্দুস শাকুর ও স্ত্রী রুমেনা বেগমের নামে তিনটি সাফ কবালা দলিল সম্পাদনের খবর জেনে তার পিতা আদালতে মামলা (কানাইঘাট সিআর ৪৪৭/২৩) দায়ের করেন। পিবিআই তদন্ত শেষে তাদের বিপক্ষে রিপোর্ট দাখিল করে। এই তিনজনের সাথে নজরুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও এমএ জামানকেও অভিযুক্ত করে পিবিআই। আদালত সমন জারি করলে তারা কয়েকবার রাসেলকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছেও হত্যা চেষ্টার মিথ্যা অভিযোগ করেন। কোনো লাভ না হওয়ায় সামাদ ও তার লোকজন ৪ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে নিহত ও আহতের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তাকে আসামী করে (জিআর ১৫২/২৪)। আদালতে আত্মসমর্পনের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর আব্দুস শাকুর, জামান, জাকির, নজরুল, গোলাপগঞ্জের এসএস ফার্মেসির মালিক সালিক, তৎকালীন ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের, এসআই সৈয়দ জামান, এসআই আনন্দ চন্দ্র ও এসআই আব্দুল হান্নান মিলে রাসেল রবির পিতা নূর উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে সামাদ গংয়ের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নিলে এবং সম্পত্তির দাবি ত্যাগ না করলে সারাজীবন রাসেলকে কারাগারে রাখার হুমকি দেন। তারা ২ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন। তিনি এসআই আনন্দ চন্দ্রের নিকট ২০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু তবু গোলাপগঞ্জে ৪ আগস্টে আহত নিহতের ঘটনায় জড়িয়ে জিআর ১৪১/২৪, জিআর ১৩৯/২৪, জিআর ১৩৬/২৪ মামলায় তাকে শ্যান অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১ মাস ১৩ দিন কারাগারে আটকে রাখেন তারা।
তিনি জানান ১৩ নভেম্বর জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি দেখেন তার সমস্ত সম্পত্তি তারা দখল করে নিয়েছে এবং ধান ও মাছসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। এরপর তিনি ন্যায় বিচারের আশায় ২১ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি মীর আব্দুন নাসের, এসআই সৈয়দ জামান, এসআই আনন্দ চন্দ্র ও এসআই আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন (স্মারক নং, সিল ৭২০)। এখনো তিনি গ্রেফতারের আতঙ্কে সপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন রাসেল রবি। তিনি তার সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং সামাদ গংদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহনের মাধ্যমে তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও বাঘা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বর্তমানে লন্ডনে। তবে তার ভাই আব্দুস শাকুরের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সাড়া দেননি অভিযুক্ত নজরুলও। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় কর্মরত এসআই আনন্দচন্দ্র তার মাধ্যমে লেনদেন বা ২ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়া বা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার এসব অভিযোগ মিথ্যা। একই ঘটনায় একাধিক মামলা হওয়ায় তিনিও একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাসেল রবির পিতা নূর উদ্দিন এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন।