উজ্জ্বল দাশ ওসমানীনগর (সিলেট)::সিলেটের ওসমানীনগরের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুনী মেলা নদীখেকোদের দাপটে জৌলুস হারিয়েছে। ২০ মার্চ সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার তাজপুর বাজারে অনুষ্টিত মেলায় গিয়ে দেখা যায় হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দোকান বসেছে মেলায়, লোক সমাগম ও বিগত বছর গুলির তুলনায় অনেক কম , একটা সময় উপজেলার ভিবিন্ন স্থান থেকে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত থাকতো এই মেলা,নারী, শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়সের সকল ধর্মের মানুষ বারুনী মেলাতে উৎসাহ ভরে অংশ নিতেন। কিন্তু আজ যেন এসব কিছুই অতীত।।
জানা যায় যে বুড়ি-বরাক নদীকে কেন্দ্র করে ৩ থেকে ৪ শত বছর ধরে এই মেলা হত সেই নদী আর জীবিত নেই।নদীখেকোদের দাপটে মরে গেছে বুড়ি-বরাক নদী।দখল আর ভরাট হয়ে গেছে সম্পুর্ন নদীটিই ।চারিদিকে অবৈধ্য স্থাপনা আর ময়লার ভাগাড়।
জানা গেছে, সনাতন ধর্মালম্বী প্রতি বছর দোল পূর্ণিমা তিথিতে শত বছর আগে বুড়ি-বরাক নদীতে পূণ্য স্নান করতেন। মহাভারতে বর্ণিত বড়ি-বরাক নদী গঙ্গার সাথে যুক্ত। গঙ্গা নদী হচ্ছে পাপ মোচনকারী নদী। পুর্ণিমা তিথিতে গঙ্গার জোয়ারের পানি বুড়ি বরাক নদীতে এসে মিলিত হয়। সঙ্গত কারণেই যারা গঙ্গা নদীতে স্নান করতে অক্ষম তারা বুড়ি বরাক নদীতে পূণ্য স্নান করতেন। গোয়ালা বাজার, তাজপুর, বেগমপুর, লামা গাভুরটিকি পাঁচপীরের মোকাম, বরুঙ্গা এলাকায় প্রভৃতি মোহনায় হাজার হাজার মানুষ পূণ্য স্নান করতেন। তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যোগানের লক্ষ্যে মেলার শুরু হয়। আর তখন উপজেলার তাজপুর বাজারে সবচেয়ে বেশী লোক সমাগম ঘটতো। সেখানের বারুনীর মেলা ছিলো সিলেটের বিখ্যাত। দক্ষিনে ঢাকা দক্ষিন মহাপ্রভূর মেলা আর তাজপুরের বারুনী মেলা হচ্ছে সিলেটের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী মেলা। বর্তমানে বুড়ি বরাক নদী ইতিহাস থেকে প্রায় হারিয়ে গেলেও ইতিহাসের পথ ধরে সে মেলা এখনো অনুষ্ঠিত হয়। তবে আগে মেলা একটানা ৭দিন ধরে থাকলেও বর্তমানে তা সীমিত আকারে (১দিনে) এসেছে, কিন্তু নেই আগের সেই জৌলুস।
প্রবীণ রইচ উল্যা বলেন, আগে অনেক দূর থেকে মানুষ আসতো। বুড়ি-বরাক নদীতে গোসল করে যাবার সময় বাড়ির বাচ্চা ও অন্যদের জন্য বিভিন্ন জিনিস কিনে বাড়ি ফিরত।এখন আর নদীও নেই তাই গোসল ও কেউ করে না।সাংবাদিক মলয় চক্রবর্তী জানান আগে মেলার সময় বুড়ি-বরাক নদীতে নৌকা দিয়ে ময়রারা মুখরোচক মিষ্টি বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতেন আরো আসতেন শতাধিক বেধে পল্লীর লোক নানা রকম পন্য নিয়ে মেলেয় বিক্রি করার জন্য।এখন নদী পথও নেই তারাও হারিয়ে গেছেন।
মেলায় কেনা বেচা প্রসঙ্গে খেলনা সামগ্রী বিক্রেতারা জানান, বিকিকিনি খুব খারাপ। করোনার কারনে গত ২ বছর এই মেলাই হয়নি,এবার যা-ই আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু মেলায় জায়গার অভাব থাকায় আমাদের দোকান নিয়ে বসতে রীতিমত প্রতিযোগীতায় নামতে হয়েছে। মূলত এটা হিন্দুদের মেলা হলেও ধীরে ধীরে তা সর্বজনীন মেলায় পরিনত হয়েছে এমন মন্তব্য মেলায় আগন্তুকদের। মেলায় বিভিন্ন পন্য সামগ্রীর বিক্রেতারা জানান, তারা বলেন গত কয়েক বছর ধরে তারা মেলায় আসছেন। তবে আগের মত মেলা জমছেনা। পূর্বে মেলাগুলোতে প্রচুর লোকসমাগম ঘটতো। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মেলায় বিক্রেতাদের যত্রতত্র বসতে হয়। এতে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বিঘ্ন ঘটে। আগামীতে মেলা যাতে সম্প্র্রসারিত করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।