নিউজ ডেস্ক, সিলেটপোস্ট২৪ডটকম : ৭ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পে শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকাও কেঁপে উঠে। ভারতে অন্তত ৩৬ জন, তিব্বতে ১২ জন এবং বাংলাদেশে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ভূমিকম্পে হিমালয় পর্বতমালায় ব্যাপক তুষার ধস হয়েছে। এতে অন্তত ১৮ পর্বতারোহীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এই সংখ্যাও আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজধানী কাঠমান্ডুতে বহু ভবন ধসে পড়েছে, এর মধ্যে বিশ্বঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত ধারারা টাওয়ারসহ অনেক পর্যটন কেন্দ্রও রয়েছে।
ভয়াবহ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে নেপাল সরকার। উদ্ধারকাজে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ইউএস জিওলজিকাল সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর পোখারা থেকে ৫০ মাইল পূর্বে ভূপৃষ্ঠের মাত্র ২ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্র।
ভূপৃষ্ঠের অল্প গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
ভূমিকম্পের পর মৃতের সংখ্যা ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়তে থাকে। রাতে নেপালের একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স মৃতের সংখ্যা ১১৩০ জন বলে জানিয়েছে।
বিবিসির এই সংখ্যা প্রায় এক হাজার বলে উল্লেখ করেছে। কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিহতের সংখ্যা দেড় হাজার পর্যন্ত জানিয়েছে।
তবে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকে চাপা পড়ে থাকায় সব সূত্রই বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কাঠমান্ডুতে, নিহতের মোট সংখ্যার প্রায় অর্ধেকেই রাজধানী এলাকারই।
ভূমিকম্পের পরপরই কাঠমান্ডুর অনেকে ধসে পড়া ঘর-বাড়ির ছবি ইন্টারনেটে তোলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিধ্বস্ত ভবনগুলোর আশেপাশে পাথরকুচি ছড়িয়ে আছে। রাস্তায় বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে এবং আতঙ্কিত মানুষজন বাচ্চাদের নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করছে।
ওই সময়ের পরিস্থতি বর্ণনা করে রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেন, “অনেক ভবন ধসে পড়ে, সবাই তখন নেমে এসেছিল পথে। অনেকে ছুটতে থাকে হাসপাতালের দিকে।”
পর্যটনের জন্য সুপরিচিত দেশ নেপালে বর্তমানে তিন লাখ বিদেশি অবস্থান করছিলেন বলে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় জানায়।
এদেরই একজন ভারতের দেবযানী পান্থ, যিনি তখন বসে ছিলেন কাঠমান্ডুর একটি কফি শপে।
“হঠাৎ টেবিল কাঁপতে থাকল, দোকানের দেয়ালটি ধসে পড়ল, আমরা বেরিয়ে এলাম বাইরে,” রয়টার্সকে বলেন তিনি।
বেড়াতে গিয়ে এখন ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়া কাজে লেগে পড়েছেন ভারতীয় এই নারী।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুতে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য ধারারা টাওয়ারও ধসে পড়েছে। ১৮৩২ সালে রানির জন্য নির্মিত এই স্থাপনার চূড়ার বেলকনিটি ১০ বছর আগে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
৬০ মিটার উচ্চতার টাওয়ারটি এখন ১০ মিটার উচ্চতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর নিচে অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাঠমান্ডুর একটি পার্কে ভাস্কর্য ভেঙে তার নিচে চাপা পড়েন এক নারী শিশু নিহত হয়। বিধ্বস্ত বিভিন্ন ভবনের নিচে এরকম অনেকে আটকা পড়ে আছেন।
বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, এদের মধ্যে অনেকেই হাত-পাসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছেন।
নেপালের তথ্যমন্ত্রী মিনেন্দ্র রিজাল আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে বলেছেন, “আমাদের এখন আন্তর্জাতিক সব সম্প্রদায় থেকে সাহায্য প্রয়োজন। আমরা এখন যে দুর্যোগের মুখে পড়েছি, তা মোকাবেলায় যাদের বেশি জ্ঞান ও সরঞ্জাম রয়েছে, তাদের সাহায্য এখন আমাদের জন্য জরুরি।”
ভূমিকম্পের কারণে মাউন্ট এভারেস্টেও ভয়াবহ তুষার ধসের সৃষ্টি হয় এবং এতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর পর্বতারোহী একটি দল এভারেস্টে ১৮টি মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র।
তবে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় ১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলেও নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জ্ঞানেন্দ্র শ্রেষ্ঠা বলেন, ধসের কারণে এভারেস্টের বেইজ ক্যাম্পের কিছু অংশ বরফের নিচে চাপা পড়েছে। ওই এলাকায় অবস্থান করা শত শত পর্বতারোহীর জীবন নিয়েও শঙ্কা জেগেছে।
“ক্যাম্পের দুইটি তাঁবু আহত মানুষে ভরে গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। নিহতদের মধ্যে বিদেশি নাগরিক এবং শেরপারা রয়েছে।”
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যখন ভূমিকম্প হয় তখন অন্তত এক হাজার পর্বতারোহী (যাদের মধ্যে প্রায় চারশ জন বিদেশি) বেইজ ক্যাম্প বা এভারেস্টের চূড়ার পথে ছিলেন।
ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ নেপালের কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণসহ চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
নেপালে এর আগে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পে, ওই দুর্যোগে সাড়ে ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
ভূমিকম্পে কাঠমান্ডুতে ত্রিভূবন বিমানবন্দরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভূমিকম্পের কারণে আতঙ্কিত মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল। এছাড়া পাটনা, লক্ষ্ণৌ, কলকাতা, জয়পুর, চন্ডিগড় এবং অন্যান্য বেশকিছু শহরে কম্পন অনুভূত হয়।
https://youtu.be/DrcoqAssDCE