সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : বায়ার্ন মিউনিখ কোচ পেপ গার্দিওলার জন্য এ ম্যাচটা যেমন স্পেশাল তেমনি স্মৃতির উজান বেয়ে অতীত রোমন্থনেরও। আজ বুধবার যে তিনি ফিরছেন ন্যু ক্যাম্পে। যেখানে খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার যেমন কাটিয়েছেন তেমনি কোচ হিসেবে কাটিয়েছেন উজ্জ্বলতম সময়। বার্সেলোনাকে ১৪টি শিরোপা জিতিয়েই ন্যু ক্যাম্প ছেড়েছিলেন গার্দিওলা। এতদিন লিওনেল মেসির খেলা উপভোগ করেছেন আর প্রতিপক্ষের সর্বনাশ দেখে তৃপ্তি পেয়েছেন। কিন্তু এবার খোদ ন্যু ক্যাম্পে তার এক নম্বর মিশনই হচ্ছে মেসিকে ঠেকানো। সঙ্গে লুইস সুয়ারেজ এবং নেইমারকেও। হ্যাঁ, আজই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে সেই জিভে জল আনা ম্যাচ বার্সেলোনা বনাম বায়ার্ন মিউনিখ।
শুধু মেসি-ইনিয়েস্তা-জাভিরা? বার্সার বর্তমান কোচ লুইস এনরিকেও খেলোয়াড় জীবনে ন্যু ক্যাম্পে গার্দিওলার সতীর্থ ছিলেন। সব মিলিয়ে ম্যাচটা তাই বায়ার্ন কোচের জন্য সত্যিই অন্যরকম। কিন্তু তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে-কঠিন পেশাদারিত্বের এ যুগে অতীত নিয়ে কেউই বসে থাকে না। থাকছেন না গার্দিওলাও। বরং আজকের ম্যাচে মেসিদের কী করে ঠেকানো যায়, তার যাবতীয় কূটকৌশল তিনি ধরিয়ে দিয়েছেন টমাস মুলার, বোয়েটাং, ফিলিপ লাম আর মারিও গোটজেদের। ভাগ করে নিচ্ছেন তার বার্সা অভিজ্ঞতাও। কারণ কোচ হিসেবে নিজেকে যে আরও উঁচুতেই তুলতে চান গার্দিওলা। ইতোমধ্যেই চলতি মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগার শিরোপা জিতেছে বায়ার্ন। এখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ডাবল জেতার সুযোগ তার সামনে।
কিন্তু তিনি চাইলেও যে তা সহজে পাবেন না, তা বলাইবাহুল্য। বরং কঠিনতম চ্যালেঞ্জেই পড়তে হচ্ছে বায়ার্নকে। বার্সার বাধা টপকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকেট পাওয়া যে কতটা দুরূহ, সেটা ইউরোপের বড় সব দলের দুঁদে কোচই কমবেশি জানেন। যেমনটা বলছেন গার্দিওলাও-‘কোনো সন্দেহ নেই ন্যু ক্যাম্পে আমাদের বড় পরীক্ষাই দিতে হবে। আর মেসিকে নিয়ে আমাদের গেমপ্ল্যান তো আছেই। কিন্তু শুধু মেসি নয়, পুরো বার্সাই আমাদের আতশ কাচের তলায়। কারণ এটা মানতেই হবে বার্সায় গোলদাতার অভাব নেই। মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার-সামান্যতম সুযোগেই ওরা গোল তুলে নিতে পারে। আমরা সেদিকটাতেই নজর রাখছি। পাশাপাশি নিজেদের সেরাটা তো খেলতেই হবে।’
তো এমন ম্যাচে দুই সেরা অস্ত্র রবার্ট লেভানদোস্কি ও আরিয়েন রবেনকে পাচ্ছেন না গার্দিওলা। কারণ দু’জনেরই ইনজুরি। তারপরও মুখে বিশেষ মুখোশ পরে খেলার অনুমতি চেয়েছেন লেভানদোস্কি। ম্যানেজমেন্ট অবশ্য ওমন ঝুঁকি নিতে নারাজ। তাই গোটজে, মুলার, শোয়েইন্সটাইগার ও আলোনসোর ওপরই ভরসা রাখছেন গার্দিওলা। আর রক্ষণ ছেড়ে লিবারো হিসেবে মাঝমাঠে উঠে আসবেন ফিলিপ লাম। গোলে তো ম্যানুয়েল নয়ার থাকছেনই।
ওদিকে লা লিগা শিরোপার দিকে এগিয়ে যাওয়া বার্সা রয়েছে দুরন্ত ফর্মে। লা লিগায় শেষ ম্যাচে কর্দোভাকে উড়িয়ে দেয় ৮-০ গোলে। নিজেদের শেষ ১৬ ম্যাচের ১৫টিতেই জিতেছে বার্সা। সবচেয়ে বড় কথা, গোলের মধ্যে রয়েছেন মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার। তিন তারকা মিলে চলতি মৌসুমে একশ’ গোলের বেশি ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন। বার্সা কোচ এনরিকে ম্যাচ নিয়ে বলছিলেন-‘আমি এ ম্যাচে কাউকে ফেভারিট হিসেবে চিহ্নিত করতে রাজি নই। দুটি গ্রেট টিমের জন্য সমান সুযোগ অপেক্ষা করছে।’
এনরিকে আজ তার সেরা দলকেই পাচ্ছেন। সামনে লাতিন আমেরিকার ‘ত্রিফলা’ তো থাকছেই, আরও থাকছেন ইনিয়েস্তা ও ইনফর্ম রাকিটিচ। পেছনে আলভেস, আলবা, পিকে ও মাসচেরানো।
-কোনো দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে কি?
তাহলে জেনে রাখুন-ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় বায়ার্নের বিপক্ষে বার্সার ইতিহাসটা তেমন সুবিধার নয়। আট ম্যাচে বার্সার জয় মাত্র একটিতে। হার পাঁচ ও ড্র দুটিতে। বার্সা বস এনরিকে সেটা নিশ্চয়ই মাথায় রেখেছেন।