সুনামগঞ্জের বেশ কিছু যুবক নিখোঁজ

সিলেট পোস্ট ২৪ ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০১৫, ৪:৪০ অপরাহ্ণসিলেট পোস্ট রিপোর্ট : মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা করে সুনামগঞ্জের বেশ কিছু যুবক নিখোঁজ রয়েছে। ভাগ্য বদলের আশায় বিদেশে পাড়ি দিয়ে ৩ মাস ধরে খোঁজ নেই তাদের। নিখোঁজ এসব যুবকের পরিবারে এখন চলছে শুধুই কান্না আর আহাজারি। সচ্ছলতার স্বপ্নে বিভোর এসব যুবকের ভাগ্যে কি ঘটেছে তা পরিবারের লোকজন জানে না। স্বজনকে ফিরে পেতে দিন গুনছেন তারা।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের দামপাড়া গ্রামের আবদুস সুবাহান ৩ মাস আগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। বাড়ি থেকে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যাওয়ার পরদিন থেকেই আর কোন কথা হয়নি তার। ৩ মাস ধরে কেমন আছে, কোথায় আছে, জীবিত না মৃত তা পরিবারের লোকজন জানেন না। আবদুস সুবাহানের ফুটফুটে তপা ও শুভা নামের দুটি মেয়েও জানে না তাদের বাবা কোথায় আছে। আবদুস সুবাহানের স্ত্রী রুনা বেগম বলেন, মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাওয়ার দিন মেয়ে দুটিকে ভালভাবে দেখাশোনা করার কথা বলে রওনা দেন। বারবার বাধা দিলেও কোন কথা শোনেননি। এখন কোন খোঁজ নেই। আবদুস সুবাহানের সঙ্গে একই গ্রামের জগাই মিয়ার ছেলে রুবেলও মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যায়। তারও কোন খোঁজ নেই। রুবেলের ভাই জানায়, চৈত্র মাসের প্রথমদিকে আমার ভাইকে দালালরা সিলেট নিয়ে যায়। সিলেটে ৩ দিন রাখার পর টেকনাফ নেয়। টেকনাফ নেয়ার পর থেকে আর কোন খোঁজ নেই। সপ্তাহখানেক পর আমার ভাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানায় জাহাজে আছে। যে কোন দিন মালয়েশিয়া পৌঁছবে। আর কিছুদিন পর দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সঠিক কোন উত্তর দিতে পারে না তারা। সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সাফেলা গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে নুরুজ্জামান ও আবদুর রহিমের ছেলে আবদুল মহিমও একইভাবে মালয়েশিয়া যায়। তাদেরও খোঁজ নেই। নুরুজ্জামানের পিতা আবদুস সালাম বলেন, বাড়ি থেকে রওনা দেয়ার মাসখানেক পর দালালদের কনফারেন্সের মাধ্যমে বাড়িতে ফোন দেয় আবদুল মহিম। মোবাইলে জানায়, সাগরের মাঝে নৌকার মধ্যে খুব কষ্টে আছে। দালালদের কাছে দুই লাখ টাকা দেয়ার জন্য। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে। ছেলের কথা চিন্তা করে দালালদের হাতে টাকা দিয়েছি। টাকা দেয়ার পরও মাস চলে গেছে। আমার ছেলের কোন খোঁজ নেই। জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে লোক পাঠানোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি দালালচক্র। এদের মধ্যে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নুরপুর গ্রামের হাবিব, জমসিদ, ইয়াহিয়া ও চট্টগ্রামের হারিছ একটি চক্রের নেতৃত্ব দেয়।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের লোকজন জানায়, এ চক্রটিই দামপাড়া ও সাফেলা গ্রামের ওই চার যুবককে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়।
বারবার মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করায় দালালচক্রের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাগরপথে পাচারের খবর প্রকাশের পর সুনামগঞ্জে দালালচক্রের সদস্যরা আত্মগোপনে আছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ মানবজমিনকে বলেন, জেলার পাচারকারীচক্রের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ওই পাচারকারী দলের সদস্যদের ধরতে পারব। এরপর যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।