সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিতে নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায় পানি জমে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।
আর সিলেট নগরীর সবকটা ছড়া ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরীর মিরের ময়দান,দরগা মহল্লা,সাগর দীঘির পাড়,উপশহর, সোনারপাড়া, মিরাবাজার, যতরপুর, রায়নগর, ছড়ারপার, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, দাড়িয়াপাড়া, লামাবাজার, ভাতালিয়া, বিলপাড় এলাকা বৃষ্টির পানিয়ে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া সিলেট নগরী ঘুরে দেখা যায়,সুবিদবাজার, বনকলাপাড়া, হাউজিং এস্টেট, জালালাবাদ, লোহারপাড়া, বাগবাড়ি, কুয়ারপার, চারাদিঘীরপাড়, রায়হোসেন, হাওয়াপাড়া, কলবাখানি, কুয়ারপাড়, কাজলশাহ, পাঠানটুলা, খোজারখলা, ভার্থখলা, মেনিখলা, বারখলা, পাঠানপাড়াসহ নগরীর অন্তত ৫০টি এলাকায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
কোথাও কোথাও সড়কে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। কোনো কোনো এলাকায় বাসা বাড়িতেও পানি উঠেছে।
রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী সাধারণ মানুষ। কোথাও হাঁটু জল, আবার কোথাও কোমর পানি ভেঙে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ২৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ।
স্থানীয়রা বলছেন, নগরীর নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বিভিন্ন ছড়া-খাল দখলমুক্ত ও সংস্কার না হওয়ায় প্রতি বর্ষাতেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।
তারা বলছেন, সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় ১১টি ছড়া ও খাল দিয়েই বর্ষার পানি নিষ্কাশন হয়। এর মধ্যে রয়েছে ধুবড়ি ছড়া, গুয়ালি ছড়া, মালনী ছড়া, ভূবি ছড়া, বারুতখানা ছড়া, মির্জাজাঙ্গাল ছড়া, কেওয়া ছড়া, বৈঠা ছড়া, গাভিয়াল খাল, রত্মারখাল ও বাবুর ছড়া।
এক সময় এসব ছড়া দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বড় বড় নৌকায় মানুষ দূর-দূরান্তে যাতায়াত করত। কিন্তু এখন কোনো কোনোটির অস্তিত্ব এখন কেবল সিটি করপোরেশনের মানচিত্রে। বাকিগুলো ভরাট হয়ে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।
ছড়া ও খালের উভয় পাশ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। অনেকে আবার পুরো ছড়া ভরাট করে দালান তুলেছেন।
ফলে এবার বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন নগরীর বাসিন্দারা।
খোজারখলা এলাকার বাসিন্দা জুমাদিন আহমদ বলেন, শুষ্ক মৌসুমে ছড়া উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথা না থাকলেও প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের আগে তড়িঘড়ি করে ছড়া সংস্কারের কাজ শুরু হয়।
নগরীর দরগা মহল্লার একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবের পরিচালক আহমেদ রাসেল জানান,সকাল ১০ ঘটিকায় তিনি অফিসে এসে দেখতে পান পুরো অফিসে কোমড় পানি।এতে তাঁর ২টি কম্পিউটার,১টি ল্যাপটপ এবং অফিস সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশন বর্ষা মৌসুম আসার আগেহ যদি সবকটি খাল,ড্রেন পরিষ্কার করে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না করেন তবে পুরো বর্ষা মৌসুমে নগর বাসীকে দূর্ভোগ পোহাতে হবে কেননা সিলেট হচ্ছে বৃষ্টি প্রবল এলাকা তাই তিনি সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানান অতি সত্বর যেন পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয় এতে নগরবাসীর দূর্ভোগ কমবে।
ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ করলেও জলাবদ্ধতা কমেনি। এর কারণ হিসাবে করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) নূর আজিজুর রহমান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করেছেন।
সিলেত পোষ্টকে তিনি বলেন, নগরীর ছড়া সংস্কারের জন্য ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ করেছে করপোরেশন।
এছাড়া নগরীর ৫৬৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৪৭৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।
প্রকৌশলী আজিজুর বলেন, “এখনও করপোরশন জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া খননের কাজ করছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা হচ্ছেই। আসলে দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধান করতে দীর্ঘমেয়াদী একটি পরিকল্পনা দরকার।”