নিজস্ব রিপোর্ট : নির্মম নির্যাতন ও পাশবিকতায় খুন হওয়া সিলেটের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে রোববার। হত্যাকান্ডের ৪ মাসের মাথায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা আলোচিত এই মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।
দেশে এই প্রথম কোন মামলা দ্রুততম সময়ে নিয়মিত আদালতে রায় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ । ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। রাজন হত্যার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখে দেশ বিদেশে আলোড়নের সৃষ্টি হয় ।
গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন ও হত্যাকান্ডের পর মুহিদ আলমের স্ত্রী লিপি বেগম ও শ্যালক ইসমাইল হোসেন আবলুছকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট তা আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ (চার্জ ) গঠন করেন আদালত।
অভিযুক্তরা হচ্ছেন সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মৃত আবদুুল মালেকের ছেলে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম, তার মেজো ভাই মুহিদ আলম (৩২), বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪), ছোটভাই পলাতক শামীম আহমদ (২০), সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের অলিউর রহমান ওরফে অলিউল্লাহর ছেলে মো. জাকির হোসেন পাভেল ওরফে রাজু (১৮), জালালাবাদ থানার পীরপুর গ্রামের মৃত মব উল্লাহর ছেলে সাদিক আহমদ ময়না ওরফে বড় ময়না ওরফে ময়না চৌকিদার (৪৫),
পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়া (২০), শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০), সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলী (৪৫), শেখপাড়া গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে তাজউদ্দিন আহমদ ওরফে বাদল (২৮),
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ী) মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেল (২৫)।
হত্যার পর লাশ গুম চেষ্টার অভিযোগে আদালতের বিচারক মুহিদ আলম, ময়না চৌকিদার, তাজ উদ্দিন আহমদ বাদল ও শামীম আহমদের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযোগ আনা হয়। গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হয় রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। এরপর ৪, ৭, ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৮ অক্টোবর চলে সাক্ষ্যগ্রহণের কাজ। মামলার মোট সাক্ষী ৩৮ জনের মধ্যে ৩৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
চার্জশিট আমলে নেয়ার পর, ২৫ আগস্ট পলাতক কামরুল ও শামীমের মালামাল ক্রোক করে নগরীর জালালাবাদ থানা পুলিশ।
গত ৩১ আগস্ট রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি পলাতক কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও আরেক হোতা পাভেলকে পলাতক দেখিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজন হত্যা মামলা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। গত ১৫ অক্টোবর রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সৌদিতে পলাতক কামরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
এবং কামরুলের পক্ষে ৫৪০ ধারার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ বিচারক সহ ১১ স্বাক্ষিকে জেরা করেন তার নিয়োজিত আইনজীবীরা । পরবর্তীতে ২৫ ও ২৭ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক শেষে ৮ নভেম্বর মামলার রায়ের তারিখে ঘোষণা করেন মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আকবর হোসেন মৃধা ।
এ ব্যাপারে রাজনের বাবা আজিজুর রহমান আলম জানান, তার ছেলে হত্যাকারীদের সর্বচ্চো শাস্তি মৃত্যুদন্ড চান তিনি ।
আসামী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট হাবিবুর রহমান জানান, রায় যদি তাদের বিপক্ষে যায় তবে তার আসামীরা উচ্চ আদালতে আপিল করবে ।
সিলেট জেলাবারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্ম্দ লালা জানান, রাজন হত্যাকান্ড একটি নির্মম ঘটনা যা দেখলে যে কারো ঘা শিউরে উঠে । তাই এই হত্যাকান্ডে জড়িতদের সর্বচ্চো শাস্তি দেয়া উচিত ।
সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি এডভোকেট মফুর আলী জানান, রাজন হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম আাদলত দ্রুত সময়ে শেষ করেছেন । তাই ৪ মাসের মাতায় রোবাবার আলোচিত রাজন হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত ।