এই ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন নির্ঘাত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাঘা এলাকার গোলাপনগর বড়বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা তোতা মিয়া ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র পুত্র তারেক আহমদ (৪০)। ওইদিন সন্ত্রাসী হামলায় শুধু বাতাক্লঁ থিয়েটারে নিহত হয়েছেন ৮৯ জন।
তারেক আহমদ ৯৩ সালে এসএসসি পাশ করেন গোলাপগঞ্জের এমসি একাডেমি থেকে। সিলেট মদন মোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরবর্তীতে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাশ করেন। ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তারেক সবার বড়। জীবন জীবিকার তাগিদে ২০০৩ সালে ফ্রান্স আসেন। ২০০৭ সালে প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ পান। দেশে রয়েছেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী শারমিন আক্তার।
এই লোমহর্ষক ঘটনার যখন বর্ণনা দিচ্ছিলেন তারেক আহমদ তখন বার বার এক অজানা আতংক তার চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল।
তারেক জানান, বাতাক্লঁ থিয়েটারের বারে আমি ৭ বছর ধরে কাজ করে আসছি। বিকেলের শিফটে প্রতিদিন ৫টা থেকে রাত ১২-১ টা পর্যন্ত কাজ করতাম। এখানে কাজের সুবাদে অনেকের সাথে একটা হৃদিক সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন দেশের লোকজন এখানে কাজ করতো। একমাত্র বাংলাদেশী ছিলাম আমি।
বাতাক্লুঁতে যারা কাজ করত শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় অনেকেই মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। বিশেষ করে থিয়েটারে কাজ করতো নাতালি, তার মৃত্যুটা আমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে। মেয়েটি খুব ভালো ছিলো। ওকে গুলি করতে দেখেছি আমি। কোনো কিছু বোঝে উঠার আগেই ঝাঁঝরা হয়ে গেছিল তার শরীর। সার্ভিসম্যান লুইও গুলি খেয়েছে। তবে মারা যায়নি সে। গুরুতর আহত হয়ে ভাগ্যচক্রে বেঁচে গেছে সে।
প্যারিসের লা প্লেইনের রুই লান্দির ১২নং বাসায় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তারেক জানান, আমি বেঁচে আছি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। কিভাবে বেঁচে গেলাম। ডাক্তার বলেছে রেস্ট নেয়ার জন্য। পুলিশ এসে গাড়িতে করে নিয়ে গেছিলো থানায়। ঘটনার বিষয়বস্তু জেনে আমাকে আবার আমার বাসায় ফিরিয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বলেছে। এরূপ পরিস্থিতির স্বীকার যাতে আর কেউ না পড়ে সেই দোয়া করি। তারেক দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।