সংবাদ শিরোনাম
শাল্লার হবিবপুর গ্রামে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু  » «   সিলেটে গণপূর্তের উপ সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মামলা  » «   কমলগঞ্জের শমসেরনগরে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছুরিকাঘাতে আহত  » «   এরাবরাক নদীর উপর সেতু উদ্ধোধন-হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার কয়েক লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ হলো  » «   সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু  » «   ওসমানীনগরের সাজুর লাশ দেশে আসছে রবিবারে  » «   যাদুকাটা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ  » «   মামলার বিচার নিষ্পত্তিতে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ  » «   জৈন্তাপুরে চারিকাটায় “দি মেঘালয় চা-বাগানের” লীজ বাতিল করে স্থানীয় ভূমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্তের দাবী জানিয়ে মানববন্ধন   » «   জৈন্তাপুরে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর প্রশাসনের সহযোগিতায় মসজিদের জায়গার সীমানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি  » «   সিসিক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন আরিফুল হক চৌধুরী   » «   পর পুরুষের সাথে স্ত্রীর যুক্তরাজ্য যাওয়ার খবরে পর্তুগালে স্বামীর আত্মহত্যা  » «   সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পাখির বাসা ভাঙতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু  » «   জৈন্তাপুরে সিলেট তামাবিল সড়কের কাটাগাং এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুঘর্টনায় ২জন নিহত, আহত ৩  » «   জৈন্তাপুর মডেল থানা কর্তৃক ১৪৮ পিস ইয়াবা সহ ০১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার”  » «  

তিস্তাপাড়ের মজনু বৃত্তান্ত

DSC_0699

হাসান আহমেদ

এপার-ওপার দুই জেলা। একদিকে নূরলদীনের নীলফামারী অন্যদিকে ভাওয়াইয়া সুরের লালমনিরহাট। মাঝে বহমান তিস্তা। দুই পার এক করেছে ব্যারেজ কাম ব্রিজ। আর এক করেছে মজনু। তিস্তাপাড়ের মজনু। ফল-আচারের কিশোর মজনু। ৬ বোনের আদরের একমাত্র ভাই মজনু।

মজনুর ফলের গাড়ি লালমনিরহাটের চেকপোস্ট কলোনীতে থাকে। যায় নীলফামারীর ডোমারে। গাড়িতে থাকে বরই, পেয়ারা আর নানা পদের আচার। তিস্তা ব্যারেজ ব্রিজে ঘুরতে যাওয়া মানুষ অথবা গাড়িতে পারপার হওয়া মানুষ একটু থামে কিশোর মজনুর আচারের স্বাদ নিতে। তার সারল্যের ভাগিদার হতে। শীত নেই গ্রীষ্ম নেই ১৭ বছর বয়সী মজনুকে পাওয়া যায় তিস্তাপাড়ে দুপুর থেকে রাত। ছয় বছর ধরে এমন চলছে। সকাল কাটে স্কুলে। দোআনী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র সে। পড়তে ভীষণ ভালো লাগে মজনুর। কিন্তু কতদূর পড়তে পারবে সে জানে না। তার ধারণা এসএসসি দিয়ে আর পড়াশোনা হবে না তার। কারণ সংসারের হাল ধরতে হবে আরও বেশি করে। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে যে সে।

৬ বোনের মধ্যে ৫ বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট বোনের বিয়ে বাকি। নাম তার লাইলী। লাইলীর জন্য সমন্ধ আসছে। অন্য বোনেদের যখন বিয়ে হয় তখন বুঝদার ছিল না। এখন বড় হয়েছে, তার একটা দায়িত্ব আছে না! তাই সে টাকা জমায়। বাড়তি খরচ করে না। সিনেমা দেখার ইচ্ছা করলেও হলে যায়না। বড় দুলাভাই একটা মোবাইল কিনে দিয়েছে। তাতে ফেসবুক চালায়। মোবাইলেই সিনেমা দেখে। শাকিব খানকে খুব ভালো লাগে তার। মোবাইলে সিনেমা দেখলে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাবে আর সিনেমাও হবে না জানালে সে কথা দেয় সিনেমা হলে গিয়ে সপ্তাহে একবার হলেও ছবি দেখবে। আবার পরক্ষণে সারল্যভরা কণ্ঠে বলে, ‘মোবাইলে যা দেকি সেইগুলান সব এক নাগে। সব ফিলিম এক নাগে।’

অনেকবার ঢাকায় এসেছে সে কিন্তু ঢাকায় স্থায়ী হতে চায় না। কারণ তার বাবা মা যে এখানে থাকে। তাদেরকে ছেড়ে সে কোথাও যাবেনা। ঢাকার কাঁচপুরে তার বড় বোন থাকে। বড় বোনাই অটো গাড়ি চালায়। বড় বোনের ঘরে এক ভাগনে আর ভাগনি আছে মজনুর। তারা মামা বলতে অজ্ঞান আর সেও ভাগনে-ভাগনির জন্য পাগল। ঢাকায় মাঝে মাঝে যায় ওদের জন্যই। গাজীপুরেও গেছে সে মামার বাড়িতে।

বড় হয়ে কি হতে চাও প্রশ্নে আরো সরল উত্তর তিস্তাপাড়ের কিশোরের, ‘কেমনে কমু? আমি ভাবিনাই। ধরেন ভাবলাম একটা হেইটা যদি না হয়?’ বলে আবার স্বাভাবিক ছন্দে চলে যায় প্রসঙ্গান্তরে। কোনো জড়তা নেই, নেই ভণিতা কিংবা নাগরিক জটিলতা। তিস্তার প্রবাহমানতা তার চলনে বলনে আবার ক্রমশ শুকিয়ে আসা তিস্তার বিষন্নতাও বুঝি ছায়া ফেলে তার কিশোর স্বত্ত্বায়। ক্রিকেট খুব ভালো লাগে তিস্তা কিশোরের। তিস্তার শুকিয়ে আসা চর আর স্কুলের মাঠে নিয়মিত খেলে সে। আচমকা প্রশ্ন করে বসে, ‘ভাই বলতে পারেন নদীর বুকে এত চর ক্যান? নদীতে তো খালি পানি থাকনের কথা? নদীতে চর পড়ে কেমনে? স্যাররে জিগাইছি, কিছু বলেনাই।’ আচমকা শুরু যেমন তেমনি থেমে যাওয়া।

লালমনিরহাটের হতিবান্ধা থানার নিশচেকসুন্দর গ্রামের কৃষক রাজ্জাক মিয়ার ছেলে মজনু পেস বল করে। ব্যাট করে দুই নম্বরে অথবা তিন নম্বরে। পেটাতে পছন্দ করে বল। তার ভালো লাগে নাসির হোসেনকে। কারণ রংপুরের ছেলে সে। নাসিরের বাড়ির কাছে গিয়েছিল মজনু। সেখানে নাসিরকে সামনাসামনি দেখেছে। আর ভালো লাগে সাকিব, তামিম ও সৌম্যকে। সবাই বাংলাদেশের খেলোয়াড়, বাইরের দেশের কারো খেলা ভালো লাগেনা? প্রশ্নে কিশোরের সংক্ষিপ্ত অথচ দৃঢ় প্রশ্নমিশ্রিত উত্তর, ‘নিজ দ্যাশের বাইরে কাউরে ভালো লাগব ক্যান?’

আর ভালো লাগে সার্কাস। দ্য নিউ রওশন অপেরার সার্কাস। তিনবার দেখেছে সে সার্কাস দলের খেলা। হাতি, বাঘ আর ভাল্লুক সবই আছে সেই সার্কাস দলে। যতবার সার্কাস দেখেছে ততবার মজনু অবাক হয় এই ভেবে, বনের ভয়াল বাঘকে দিয়ে কি করে মানুষ খেলা দেখায়। তিস্তা কিশোর মজনুতো আর জানেনা মানুষ বাঘের চাইতেও ভয়ংকর হয়। তার সার্কাসের মাস্টারকে সবচাইতে ক্ষমতাশালী মনে হয়। কোন কিছু হতে না চাওয়া তিস্তা কিশোরের মাঝে মাঝে বাঘ-হাতি-ভাল্লুক খেলানো ‘মাস্টার’ হয়ে যেতে ইচ্ছে হয়।

একদা প্রমত্তা তিস্তা আর বর্তমানের কান্নার স্রোতধারা হয়ে ওঠা তিস্তা কি কিশোরের ইচ্ছা জানতে পারে? নাকি জানতে চায়?

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.