সিলেটপোস্ট ডেস্ক : পয়তাল্লিশ পেরিয়ে ছেচল্লিশে পা দিয়েছেন আকু মিয়া। কিন্তু বিয়েটা এখনো করা হয়নি তার। বিয়ে যে করতে চাননি এমনও নয়। আজ কাল করতে করতে কখন যে জীবনের অনেকটা সময় চলে গেছে টেরই পাননি। তবে বিয়ে করার জন্য অনেকবার মেয়ে দেখাও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়ে পছন্দ হয় না বলে সামনে আর এগুনো হয় না।
পরিবারের সদস্য বলতে আকু মিয়া একাই বলা যায়। মা-বাবাকে হারিয়েছেন সেই ছোটবেলায়। ভাই বোন যারা বেঁচে আছেন তাদের সাথে তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। জীবনের অনেকটা সময়ই কাটিয়েছেন একা। বন্ধু-বান্ধবও কম। তিনি অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক স্বভাবের। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কারো কাছে যান না। নিঃসঙ্গ আকু মিয়ার একটা বাতিক আছে। আর সেটা হলো তিনি প্রায়ই অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নগুলো এমন যা তিনি জীবনে একবারের জন্যও ভাবেনি। তবে কিছুটা হলেও অনুমান করতে পারেন কোন দিন এমন অদ্ভুত টাইপের স্বপ্ন দেখবেন। অতীতে তিনি যেসব স্বপ্ন দেখেছেন সবগুলোই বৃহস্পতিবার না হয় শুক্রবারে। এটি দেখেন একদম রাতের শেষভাগে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় কিছুটা রিলাক্সড মুডে থাকেন আকু মিয়া। এই কারণে বৃহস্পতিবার রাত জেগে সিনেমা দেখেন তিনি। এরপর শেষরাতে ঘুমাতে যান। আর তখনই এইসব আজগুবি স্বপ্ন দেখেন। আজ শুক্রবার। ব্যতিক্রম হয়নি আজও।
শেষরাতে ঘুমালেন। ঘুমানোর কিছুক্ষণ পরেই দেখলেন অদ্ভুত একটা স্বপ্ন। স্বপ্নে তিনি দেখলেন তিনি বিয়ে করেছেন। এটা নিশ্চয়ই সবার জন্য সুখবর। তবে আকু মিয়ার কাছে এটা সুসংবাদ না হয়ে দুঃসংবাদ হয়ে দেখা দিল। কারণ তিনি তার বউকে চুম্বন করতে পারছেন না। চুম্বন করতে বউ বাঁধা দিচ্ছেন বা বউয়ের মুখ থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। সমস্যা হলো তিনি যখনই তার বউকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে যান ঠিক তখনই তার ঘুম ভেঙে যায়! এভাবে একবার দুইবার নয়, পাঁচবার ঘটলো ঘটনাটা। কেনো এমনটি হচ্ছে তিনি তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। এই কারণে আকু মিয়ার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। খারাপ হওয়ারই কথা। কারণ তিনি অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেন, তার নিজের বউকে চুম্বন করতে পারছেন না!
এমন একটা মুহূর্তে কাছ থেকে ফিরে এলে যে কারোই মন খারাপ হয়ে যায়। তিনি চুম্বন করতে না পারার যন্ত্রণাটা সহ্য করতে পারছেন না। বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ব্যথায় আকু মিয়া ওই রাতে আর ঘুমাননি! ইচ্ছে করে যে ঘুমাননি তা নয়, ঘুম তার আসেনি। তাই রাতের বাকি সময়টুকু রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে পার করেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো গাইতে পারনে তিনি। স্কুলজীবনে অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে। অন্যদিনের মত আজও আকু মিয়া স্বপ্নটা নিয়ে বেশ টেনশনে পড়ে গেলেন। এই স্বপ্নের কী এমন ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
বিষয়টি যদি একবার হতো তাহলে এটাকে স্বাভাবিক বলে মনে হতো তার। কিন্তু একাধারে পাঁচবার! আকু মিয়ার সন্দেহটাই এখানে, কেনো এমন হবে! তিনি কারো কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যাও চাইতে যান না। কারণ সবাই তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করে। সবাই বলে, এমনসব অদ্ভুত স্বপ্ন শুধু আপনিই দেখেন কেনো? আমরা তো দেখিনা। মিয়া বিয়ে করে ফেলেন তাহলে আর আজেবাজে স্বপ্ন দেখবেন না! কিছুদিন আগে আকু মিয়া একটা খাবনামা বইয়ে পড়েছিলেন, স্বপ্নে বিয়ে করতে দেখলে মানুষ মারা যায়! এটা ভাবলে তার গা শিউরে ওঠে। হাত পা কেমন যেনো ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
তবে কলিগ সুরুজ আলীর সাথে মাঝে মাঝে কিছু স্বপ্নের কথা শেয়ার করেন। আজকের এই স্বপ্নটার কথাও তাকে বললেন। কিন্তু সুরুজ আলী এই স্বপ্নের যুৎসই কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারলেন না, যা আকু মিয়া বিশ্বাস করে নেবেন। পরিবর্তন