সিলেটপোস্ট২৪রিপোর্ট :যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যে আমাদের ভাব বিনিময় প্রয়োজন। আর ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে কথা। এই কথার দ্বারাই সম্পর্ক গভীর হয়, আবার এই কথার দ্বারাই অনেক গভীর সম্পর্ক হয়ে যায় হালকা।
তাই ভাব বিনিময়ের এই প্রধান মাধ্যমটি বিনিময়ের সময় আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে। অনেক সময়ই আমরা এমন কিছু মন্তব্য করি যে, নিজের অজান্তেই অন্যকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। আমার কথায় যে কেউ কষ্ট পাচ্ছে অনেক সময় আমরা সেটা বুঝতেই পারিনা। কারণ আমরা এসব বিষয়ে নিজেকে অভ্যস্ত করে ফেলেছি।
তাই এ রকম অপ্রীতিকর ব্যাপার এড়াতে প্রয়োজন নিজেকে অন্যের স্থানে দাঁড় করানো। এবার কথাগুলো নিজের সঙ্গে বলুন। দেখুন আপনি কেমন ফিল করেন!
এই যেমন কেউ খুব শখ করে এমন একটা কালারের জ্যাকেট বা সোয়েটার কিনেছে, যে কালারটা হয়তো আপনার পছন্দ না। এমনকি যে কিনেছে, তাকেও মানাচ্ছে না। কিন্তু এই ব্যাপারটা যদি তার ‘মুখের ওপর’ বলে দেন যে, তোমাকে একটুও মানায়নি তবে কেমন হবে ব্যাপারটা? হয়তো আপনি ধ্রুব সত্য কথাটিই বলেছেন। কিন্তু একবার কী ভেবে দেখেছেন, এই সত্য কথাটির প্রয়োজন কতটুকু ছিল? তার চেয়ে আপনি মিথ্যে না বলেও ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারতেন। হয়তো আরো ভালোভাবে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল, কিন্তু তা না করে মুখের ওপর বলে দিয়ে তাকে হয়তো আঘাত করেছেন।
অনেকে হয়তো এইসব ছোট ছোট ব্যাপার খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। আবার অনেকে এসব ছোট ছোট কমেন্টে অনেক বড় মাইন্ড করে! সুতরাং সেই অনেকের তালিকা যেহেতু আপনার হাতে নেই, তাই এরকম কথা বলার রিস্ক নেয়ারই বা দরকার কী।
তাই মুখের ওপর ‘অপ্রিয়সত্য’ বলার অভ্যাস বাদ দিতে পারলে সম্পর্কের অনেক ছোট ছোট বিষয় উপভোগ করা সম্ভব।
অনেক সময় অনেক অপ্রয়োজনীয় অপ্রিয় সত্য অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় থামিয়ে দিতে পারে। হয়তো আপনার ওই অপ্রিয় সত্য তাকে এমন আঘাতই করেছে যে, এরপর থেকে হয়তো সংশ্লিষ্ট সেই বিষয়ে সে আপনাকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাবে, আপনি হয়তো টেরও পাবেননা। এটা শুধু স্বল্প পরিচিতজনের সঙ্গে নয়, আপনজনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
মানুষ মুখে হয়তো বলে কে কী বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আসলে অনেক কিছুই যায় এবং আসেও কিন্তু সেগুলো আসলে প্রকাশ্যে আসেনা! যা যায় তা হল, সম্পর্কের মধুরতা। আর যা আসে তা হল, সম্পর্কে তিক্ততা। তাই সব ধরনের সম্পর্কে একটি সুন্দর স্থিতিশীলতার জন্যে মুখের ওপর অপ্রিয় সত্য বলাটা এড়িয়ে চলাই ভালো।
তবে আপনার সেই অপ্রিয় সত্যের গুরুত্ব যদি এমন হয় যে, সেটা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িত তবে সেখানে এটা উপেক্ষার উপায় নেই। এসব ক্ষেত্রে যত তিক্তই হোক, আপনাকে সত্যটি বলতে হবে। সত্যের বদলে মিথ্যে কিন্তু কখনোই কাম্য নয়। এমনকি ‘সফট’ মিথ্যে।
অনেকের অভ্যাস আছে মাঝে মাঝে সামান্য বা ‘আলতো’ করে মিথ্যে বলে। ভাবে, এতো করে শ্রোতা খুশি হয়। ফলে তাকে একটু ভাঁজ দেয়ার জন্যে বা খুশি করার জন্যে সামান্য একটু মিথ্যে বলা। অনেকের যুক্তি কাউকে খুশি করার জন্যে যদি সামান্য একটু মিথ্যে বলা হয়, তবে তাতে দোষের কিছু নয়। আসলে, মিথ্যে আদতে মিথ্যাই। মিথ্যের ওপর কোন কিছুর ভিত্তি খুব একটা স্থায়ী হয়না। বরং এই সফট বা হালকা মিথ্যে জীবনের কোনো এক পর্যায়ে অনেক ‘হার্ড’ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
তাই সঙ্গীর সঙ্গে তো বটেই আপনার সকল সম্পর্কের মসৃণতার জন্যে উচিত একটু ভেবে কথা বলা। দেখবেন সম্পর্কের মধুরতা আপনাকে কতটা তৃপ্তি দেয়। আর আপনার প্রতি অপরের অবিচল আস্থাও হবে আপনার জন্যে অমূল্য একটি পুরস্কার।