সিলেটপোষ্ট রিপোর্ট :অর্থমন্ত্রীর দেওয়া ‘প্রতিশ্রুতি’ পূরণ এবং বেতন কাঠামোতে ‘অসঙ্গতি-বৈষম্য’ দূর করার দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর নেতারা বলেছেন, সরকারের সাড়া না পেলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া ছাড়া তাদের আর বিকল্প থাকবে না।
আর তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রাখার দায় শিক্ষকরা নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ইমদাদুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে আজ সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে দুই শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন বলে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এইচ এম মাকসুদ কামাল জানান।
ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “গত ৯ মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দিইনি।
“এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখান থেকে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আজ কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে আমরা আবারও সময় দিচ্ছি। দাবি মেনে নেওয়া না হলে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প আমাদের থাকবে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর এক সভায় সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা না কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল রাখা, সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের মধ্যে থেকে একটি অংশকে সিনিয়র সচিবদের জন্য সৃষ্ট ‘সুপার গ্রেডে’ উন্নীত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সেই প্রতিশ্রুতির মধ্যে শুধু প্রারম্ভিক বেতনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন তিনি (অর্থমন্ত্রী)বিবৃতি দিয়ে নানা কথা বলছেন। তার মতো একজন সিনিয়র মন্ত্রীর ওপর যদি আমরা আস্থা রাখতে না পারি, তাহলে কার ওপরে রাখব?”
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, “অর্থমন্ত্রী এখন বিবৃতি দিয়ে বলছেন- প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতি না দিলে তিনি বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটিতে আলোচনা ছাড়াই এবং তাদের অনুমোদন ছাড়া পরিপত্র জারি করলেন কেন?”
অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ইমদাদুল হক বলেন, “আমরা বারবার স্পষ্ট করেছি, আমাদের আন্দোলন বেতনের পরিমাণ নিয়ে নয়, মর্যাদার জন্য। আমরা ছাত্রদের জিম্মি করতে চাই না। পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের সময় জীবনবাজি রেখে ক্লাস নিয়েছি, শুক্রবারেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রেখেছি।
“সুতরাং আমাদের যদি কর্মবিরতিতে যেতে হয়, তাহলে সেই দায় শিক্ষকরা নেবে না। সেই দায় যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের ওপর বর্তাবে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও শিক্ষকদের এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে ।
অষ্টম বেতন কাঠামো ঘোষণার পর থেকেই গ্রেডে মর্যাদার অবনমন এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষকরা।
এরপর সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই দাবি পর্যালোচনায় কমিটি করে। কমিটির সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার ১০ দিন পর বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২ জানয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠক করে এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষক ফেডারেশন। সে অনুযায়ী ৩ জানুয়ারি থেকে কালো ব্যাজ পরে ক্লাস নিচ্ছেন তারা।