সংবাদ শিরোনাম
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিএনপি জনগণের পাশে আছে : আব্দুর রাজ্জাক  » «   ৩০ বছর ধরে মিটাভারাং ও মজলিশপুরসহ অর্ধশত গ্রামের মানুষ একটি বাঁশ বেতের সেতু দিয়ে চলাচল করছেন  » «   ফ্যাসিসদের বিচারহীনতার সংস্কৃতিই ধর্ষণের কারণ-কয়েস লোদী  » «   সিলেট মহানগর জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের আনন্দ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত  » «   দেশের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিসিম-কমিশনার রেজাউল করিম  » «   ফুটপাত দখলমুক্ত আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের সমর্থন, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি  » «   সিলেট মহানগর কৃষক দলের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত  » «   ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে-কয়েস লোদী  » «   ওয়ার্ড পর্যায়ে ইফতার মাহফিল আয়োজনের আহ্বান জানালেন কাইয়ুম চৌধুরী  » «   ক্রীড়াঙ্গন নতুন করে গড়ে তোলার এখনই সময়: মোমিনুল ইসলাম মোমিন  » «   শিক্ষক জাতি গঠনের অন্যতম কারিগর-জেলা প্রশাসক  » «   পদত্যাগ করার পর যে সব কথা বললেন নাহিদ  » «   জগন্নাথপুরে ভূমিখেকো আ. লীগের সাথে ছাত্রদল নেতা মিলিত হয়ে কৃষক পরিবারকে মারধর ও হয়রানি  » «   ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে মানবাধিকার ও অনুসন্ধান কল্যাণ সোসাইটি  » «   বড়লেখায় সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাই  » «  

লেবাননে ভিসা কেলেঙ্কারিতে কনস্যুলার!

10সিলেটপোষ্ট রিপোর্ট :কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির নেতৃত্ব ১১ সদস্যের একটি দল লেবানন ঘুরে গেলেন। দূতাবাসের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম। তিনি এখন সৌদি আরব মিশনে আছেন। ভদ্রলোক প্রবাসের সংবাদকর্মীদের খুব একটা পাত্তা দিতেন না। ওই সময় আমি দীপু মনির নিউজ কভারেজে গেলে তিনি সঠিক তথ্য দিতে অস্বীকার করেছিলেন। সংবাদ সংগ্রহের সময় তার সহযোগিতা চাইলেও তেমন কোন সারা মেলেনি। ফলে ওই সময় প্রচার হওয়ায় একটি সংবাদ কিছু অংশ দীপু মনির বিরুদ্ধে চলে যায়।

আমরা যারা প্রবাসে সাংবাদিকতা করছি তারা মূলত প্রবাসে থাকা মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলো দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অনেকটা শখের বসেই এসব করছি।

এবার মূল প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চাই। লেবাননে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত চলে যাবার পর বৈরুত দূতাবাসের দায়িত্ব দেয়া হয় আব্দুল মোতালেব সরকারকে। আব্দুল মোতালেব সরকার যোগদান করার পর আগের চেয়ে এখন প্রবাসীরা অনেক ভালো আছেন।  দূতাবাস চলছে ভালই, লোকটিও মন্দ নন।

গেল ঈদ-উল আযহায় আব্দুল মোতালেব সরকার তার নিজের বাসভবন বাংলোতে ‘ওপেন হাউস’ এর আয়োজন করেন। সেখানে আমিসহ সকল সংবাদকর্মী উপস্থিত হয়েছিলাম। বিভিন্ন কমিউনিটির নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। দূতাবাসের কনস্যুলার শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানকে সালাম দেয়ার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনাকেতো দীপু মনি ভালবাসে না, আপনি বাংলাদেশে গেলে উনি (দীপু মনি) জানতে পারলে (আপনাকে) কি  করবে জানেন? আমি বুঝলাম উনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন। তার পর বলে বসলেন, আমার বিরুদ্ধে লেখেন না, দেখি কি করতে পারেন। সরকার আমাকে লেবানন থেকে নিয়ে যাক।

পরে আরেক দিন দূতাবাসে একটা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই, সেখানেও তিনি একি কথা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে লেখেন’। এভাবে পাঁচ বার উনি আমাকে বলেছিলেন তার বিরুদ্ধে লিখতে।

দূতাবাসের কর্মকর্তা আব্দুল মোতালেব সরকারের  আগ্রহেই আমি তার সম্পর্কে লিখতে রাজি হই। আর এতোবার বললে কি না লিখে উপায় আছে?

তার সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা গেল, এক/দুই নয়, দালালির মাধ্যমে অসহায় মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার এ কাজে সহযোগিতা করেছেন বেশ কিছু দালাল চক্র। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে নয় কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাও কিভাবে? বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক এনে লেবাননে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগে জানা গেছে, ফ্রি ভিসার কথা বলে লেবাননের কনস্যুলার ভিজিট ভিসায় লোক এনেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ‘লেবাননে এসে এখন আমরা বন্দী জীবন-যাপন করছি। এখানে কাজ নেই, খাবার নেই, বাঁচব কিভাবে? এদেশে আনার আগে আমাদের বলা হয়েছিল ফ্রি ভিসায় আনা হচ্ছে।’

একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, ৫ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে একেকজনের কাছ থেকে। বলা হয়েছিল ফ্রি ভিসার কথা। কিন্তু লেবানন আসার পর তারা জানতে পারেন ভিজিট ভিসার কথা।

কার মাধ্যমে এখানে এসেছেন জানতে চাইলে- লেবাননে অবস্থানরত কয়েকজন বললেন, বাদল নামে কুমিল্লার এক দালাল তাদের এনেছে। অপর দালাল সুমন গ্রেফতার হবার পর থেকে বাদল পলাতক।

আর সুমনসহ আরো কয়েকজন দালাল এই কাজ করে থাকেন যাদের নাম আমাদের কাছে এখনো স্পষ্ট নয়।

এছাড়া একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিকদার মোহাম্মাদ আশরাফুর রহমানের সুপারিশেই ‘লেবানন জেনারেল সিকিউরিটি’ এসব ভিসা দিয়েছিল।

অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, কনস্যুলারের ব্যবহৃত গাড়ি মাঝে মধ্যে দালাল সুমন ব্যবহার করতেন। প্রবাসীদের প্রশ্ন একজন প্রবাসী কিভাবে দূতাবাসের গাড়ি ব্যবহার করে।

এদিকে লেবানন জেনারেল সিকিউরিটি সূত্র জানায়, ৩০০টি ভিসা কনস্যুলার শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানের সুপারিশে হয়েছিল। যার ১৮০টি ভিসার যাত্রী লেবানন এসেছেন। এরা কেউ ফেরত যায়নি। বাকি ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু লোককে লেবানন এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলেও জানা যায়।

এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ফ্রি ভিসার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে ‘ভিজিট ভিসা’গুলো প্রসেস করেছেন চিহ্নিত দালাল সুফিয়া আক্তার বেবি। তিনি ছিলেন কনস্যুলার শিকদার এর ডান হাত। শিকদার মোহাম্মাদ আশরাফুর রহমানের সব ধরনের লেনদেন দেখা সমন্বয় করতেন সুফিয়া আক্তার বেবি। অভিযোগকারীরা আরো জানান, ভিসার ব্যবসার মূল নায়কই ছিলেন- শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান। এসব জানাজানি হওয়ায় রাতের অন্ধকারে জরুরি টিকেটের ব্যবস্থা করে সুফিয়া আক্তার বেবিকে বাংলাদেশের পাঠানোর ব্যবস্থা করেন কনস্যুলার শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণেই শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানকে লেবানন থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গত ২৭ ডিসেম্বর একটি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল লেবাননে। আর সেই ফুটবল ম্যাচে আমন্ত্রণ জানাতে আমি নিজে ২০ ডিসেম্বর দূতাবাসে যাই। ওইদিন শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানের কার্যালয়ে যাই। খেলার আয়োজকদের কয়েকজনও আমার সঙ্গে ছিল। ফুটবল খেলা দেখার আমন্ত্রণ করতে গেলে তিনিও জানান তাকে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে। তবে তার কারণ তিনি জানান নি।

এদিকে লেবানন আওয়ামী লীগের গ্রুপিং অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবার কথা ছিল বলে মনে করছেন দলটির প্রবাসী নেতারা। ডা. দীপু মনি যখন লেবানন এসে ছিলেন তখনই লেবানন আওয়ামী লীগ এক হবার কথাছিল। অভিযোগ রয়েছে, কনস্যুলার শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমানের অপকৌশলের কারণেই লেবানন আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। এমন অভিযোগ এখানকার অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতার।

শুধু আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দই নয়, লেবাননের সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন।

প্রবাসীরা চান, এখানে দুর্নীতি মুক্ত দূতাবাস। চান ভাল কর্মকর্তা। যারা প্রবাসীদের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবেন।

উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর বিকালের একটি ফ্লাইটে লেবানন ত্যাগ করেছেন শিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকায়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়াার করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Developed by:

.