কানাইঘাট প্রতিনিধি::সিলেটের কানাইঘাট বাজারে সরকারী খাস ভূমিতে অবৈধ দখলদার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কবলে থাকা ভূমির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত স্থানে পূর্ণবাসনের দাবীতে সিলেট জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় কানাইঘাট সততা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এর কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, কানাইঘাট সততা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ছিদ্দেক আলী, সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, সদস্য সায়েম আহমদ, ফয়েজ আহমদ ও সিরাজুল হক প্রমুখ।
স্মারকলিপিতে সমিতির নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন,কানাইঘাট পৌরসভায় অবস্থিত বাজারাটি সরকারি তালিকাভুক্ত একটি বাজার, যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি বার্ষিক ইজারা নিয়ে থাকেন। আমরা স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ইজারদারকে প্রতিদিন তুলা (দৈনিক কর) দিয়ে থাকি। বাজারে স্থানীয় ব্যসায়ীদের মতো ফুটপাতে ৪০০-৫০০ জন ব্যবসায়ী ফল এবং সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল বিক্রয় করে থাকেন। বিভিন্ন সময় তাদের পূর্ণবাসনের নামে নাটক সাজিয়ে উচ্ছেদের পায়তারা করা হয়ে থাকে। গত ৬-৭ দিন থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কতর্ৃক এই ফুটপাতের ব্যবসা প্রতিষ্টান উচ্ছেদে নামলেও আমাদের মতো ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের কোন পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা তিনি করেননি। যদিও আমাদের পূনর্বাসন করা হবে বলে আশ্বস্থ্য করেছেন স্থানীয় প্রশাসনের এ প্রতিনিধি। প্রায় ৪/৫ শত ব্যবসায়ীদের জন্য বাজারের দক্ষিণের রাস্তার পাশে সুরমা নদীর পাড়ে অবস্থিত পূর্বের নির্মামাণাধীন পাকার খুঁটি ও টিনের চালের ২৪টি ভিটায় পূর্ণবাসনের কথা বলছেন অথচ এ জায়গায়টিতে যুগ যুগ ধরে স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ীরা কাপড় বিক্রয় করে আসছেন। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলোচনা সাপেক্ষে মাটি দিয়ে ভরাট করে ১২টি ভিটা ৭.৫ ফুট দৈর্ঘ্য ৭.৫ প্রস্থ একেকটি ভিটায় দুইজন করে মোট ২৪ জনকে পূণর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছেন। অপর ব্যবসায়ীদের তিনি বাজারের পূর্বপ্রান্তের ডাক বাংলার সম্মুখের খোলা রাস্তায় বসার জন্য বলছেন। আমরা এ সকল জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে ব্যবসা করতে ইচ্ছুক নয়। বিভিন্নখন্ডে ব্যবসায় করলে আমরা মারাত্বক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবো। আমাদের পরিবার পরিজনকে না খেয়ে মরতে হবে, আমরা স্থায়ী ভাবে একই স্থানে সকল সবজি ব্যবসায়ী ব্যবসা করার সুযোগ চাচ্ছি। আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্টান উচ্ছেদ করলেও কানাইঘাট পৌরসভা বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদের দক্ষিণ পাশ্ববতর্ী থেকে সুরমা নদীরপার পর্যন্ত কানাইঘাট উপজেলার অন্র্Íগত খাস জমিতে বাজারের একটি প্রভাশালী সিন্ডিকেট যুগ-যুগ ধরে অবৈধ ভাবে দখল করে পাকা ঘর নিমার্ণ করে ব্যবসা করার পাশাপাশি একজন অন্যজনের নিকট শতাংশ আকারে খাস জমির দখল বিক্রি করে আসছে। তারা প্রতি শতক সরকারি খাস জমি মূল্য নিচ্ছে ৩০ লক্ষ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা।
যাহা বিগত দিনের সকল উপজেলা নিবার্হী অফিসারগণ অবগত আছেন। কিন্তু কেউই কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। গত মার্চ মাসে উপজেলা ভুমি অফিস সরেজমিন পরিদর্শণ করে ৩৩৮ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরী করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে ভূমি অফিসের যোগসাজসে এ সকল অবৈধ দখলদাররা এসব ভুমি জবর দখল করে পাকা দোকানপাট ও মার্কেট বানিয়ে ক্রয়-বিক্রয় ও মাসিক ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন। আমরা উপজেলা নিবার্হী অফিসারগনের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে আসছি এসব সরকারী জয়গা দখল মুক্ত করে প্রয়োজনে সেখানে আমাদের মতো সকল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পূর্ণবাসন করে জীবিকা নিবার্হ করার সুযোগ দিন। কিন্তু আমাদের এসব অনুরোধ কোন কর্মকতার্ই আমলে নিচ্ছেনা। সরকারি জায়গা জবর দখলবাজদের দখলে রেখে প্রতিবারই আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদের নামে হয়রানী করা হচ্ছে। আমরা বাধ্য হয়ে আপনি জেলা প্রশাসকের স্বরনাপন্ন হয়েছি,বাজারের দখলকৃত সরকারী এসব খাস জমি উদ্ধার করে উক্ত জায়গায় আমাদের মতো গরিব অসহায় ফুটপাতের ক্ষুদ্র বাবসায়ীদেরকে পুনর্বাসন করা হউক। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বারকলীপি ও তাদের মানবিক আকুতি শুনে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, আমি নিজেই বলছি, বাজারের রাস্তায় বা ফুটপাতে কোন ব্যবসা প্রতিষ্টান খোলে বসা যাবেনা। শুধু কানাইঘাট নয় সারাজেলার সব কয়টি বাজারে এবং রাস্তায় এসব অভিযান চালানো হবে। তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ও ফুটপাতের এসব ব্যবসায়ীদের পূর্ণবাসন করতে হবে। তাই যেখানে সরকারি জমি দখল করা হবে সেখানে অভিযান চালিয়ে সরকারি জমি দখল মুক্ত করা হবে। তিনি তাৎক্ষনিক ব্যবসায়ীদের আশ্বস্থ্য করে বলেন, আপনাদের পূর্ণবাসনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি কানাইঘাট উপজেলা নিবার্হী অফিসারকে নির্দেশনা দিচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সমস্যাটি সমাধানের জন্য।
এছাড়া আমি নভেম্বর মাসে কানাইঘাট উপজেলা ভিজিট করবো। বাজারের সরকারি জমি কারো দখলে থাকলে তা উদ্ধার করা হবে এবং আপনাদের স্থায়ী পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।