মোঃ আবুবকর সিদ্দীক::বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ। বর্তমানে এদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯১ শতাংশ মুসলমান। সর্বাধিক হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশের তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ।
হজ শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। যেসকল মুসলিম নর-নারীর শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সঙ্গতি রয়েছে কেবল তাদের জন্যই হজ ফরজ। হজব্রত পালনের জন্য মোটামুটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকার প্রয়োজন। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৪ সালে সরকারি মাধ্যমে ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ’ শিরোনামে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলো যেখানে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা। এসাথে নিবন্ধনের সময় অতিরিক্ত ৮ হাজার ৫৫০ টাকা পরিশোধ করে ট্রেনযোগে মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফাহ-মিনায় যাতায়াতের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া, গত হজ মৌসুমে ‘সরকারি মাধ্যমে বিশেষ হজ প্যাকেজ ২০২৪’ শিরোনামে অন্য যে প্যাকেজটি ছিলো সেখানে সর্বমোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা। এই বিশেষ প্যাকেজটির কিছু বৈশিষ্ট্যও ছিল। এ বিশেষ প্যাকেজের হজযাত্রীদেরকে হারাম শরীফের বহির্চত্বর হতে ৭০০মিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়া, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলে প্রতিরুমে সর্বোচ্চ ৪ জনের আবাসন, মিনায় ‘এ’ ক্যাটাগরির তাঁবুতে অবস্থানসহ বুফে খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ২০২৩ সালে সরকারি মাধ্যমে শুধু একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল যেখানে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা।
জনশ্রুতি আছে, বাংলাদেশের নিকটতম দেশ ভারত এবং পাকিস্তানের মুসলমানগণ বাংলাদেশের হাজীদের চেয়ে অনেক কম টাকায় হজব্রত পালন করে থাকে। এবিষয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়। একইসাথে বাংলাদেশের হজ প্যাকেজ কমানোর দাবিতে অনেকেই সোশ্যাল প্লাটফর্মেও বেশ সরব ভূমিকা পালন করে থাকেন। কেউ কেউ তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায়ও হজ পালন করতে চায়। এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের হজব্রত পালন সুলভ ও সুগম করার বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিমান ভাড়া কমানোর পাশাপাশি হজ প্যাকেজ মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণের কথা বলেছেন।
গত ৩০ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা করেছেন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ ও সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর মূল্য ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজ মূল্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। তবে সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণপূর্বক এজেন্সিকে একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সরকারি মাধ্যমে ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-১’ এ মক্কায় হারাম শরীফের বহির্চত্বর হতে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মসজিদে নববী হতে সর্বোচ্চ দেড় কিলোমিটারের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। মক্কায় হারাম শরীফে যাতায়াতের জন্য থাকবে বাসের ব্যবস্থা। এই প্যাকেজটিতে মিনায় তাঁবুর অবস্থান হবে গ্রীন জোনে (জোন-৫) এবং মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাওয়া যাবে।
সরকারি মাধ্যমে ‘সাধারণ হজ প্যাকেজ-২’ এ মক্কায় হারাম শরীফের বহির্চত্বর হতে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এবং মদিনায় মার্কাজিয়া এলাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্যাকেজের হজযাত্রীদেরকে মিনায় ইয়োলো জোনে (জোন-২) আবাসনের ব্যবস্থাসহ উন্নততর ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস ও মিনা-আরাফায় মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হবে। উভয় প্যাকেজের হজযাত্রীরা মক্কার হোটেল কিংবা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা ট্রেনযোগে যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া, মিনা এবং আরাফায় মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার পরিবেশন করা হবে। দুটি প্যাকেজেই মক্কা ও মদিনায় বাড়ি বা হোটেলে রুমসংলগ্ন বাথরুমসহ প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে। হোটেলে থাকবে রেফ্রিজারেটরের ব্যবস্থা। এছাড়া হজযাত্রীদেরকে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ঔষধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, এবছর প্রত্যেক হজযাত্রীকে খাবার বাবদ ন্যূনতম ৪০ হাজার টাকার সমপরিমাণ সৌদি রিয়াল এবং কোরবানী বাবদ ৭৫০ সৌদি রিয়াল আবশ্যিকভাবে সঙ্গে নিতে হবে। এছাড়া, উভয় প্যাকেজের হজযাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে মক্কা ও মদিনার বাড়ি বা হোটেলে ২, ৩ ও ৪ সিটের রুম এবং শর্ট প্যাকেজের সুবিধা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
সাধারণত হজ প্যাকেজে দুটি বিষয় আলোকপাত করা হয়ে থাকে, যথা: প্রতিশ্রুত সেবা ও সেবা মূল্য। হজব্রত পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সেবাসমূহকে আমরা প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমন, পরিবহণ, আবাসন, খাবার ও বিবিধ খরচ।
পরিবহণ সেবাটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা- বিমান ও বাস। বিমান মূলত একটি দেশ থেকে সৌদির জেদ্দা কিংবা মদিনা বিমানবন্দর পর্যন্ত হজযাত্রীদেরকে পৌঁছে দেয় এবং হজ শেষে সৌদি আরবের এ দুটি বিমানবন্দরের যেকোনো একটি থেকে হাজিদেরকে দেশে ফেরত নিয়ে আসে। সৌদি আরবের অভ্যন্তরে হজযাত্রীদের যাতায়াতের জন্য পরিবহণ সেবা প্রদানকারী কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পাদন করতে হয় এবং চুক্তিবদ্ধ কোম্পানি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসের মাধ্যমে পরিবহণ সেবা দিয়ে থাকে। এছাড়া, হজযাত্রীদের ব্যাগ বা লাগেজ আনা-নেওয়ার জন্যও পরিবহণ সেবা নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
হজব্রত পালনের জন্য বাংলাদেশের হজযাত্রীদেরকে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত মক্কা ও মদিনায় অবস্থান করতে হয়। এজন্য হোটেল বা বাড়ি ভাড়া করতে হয়। মক্কায় হারাম শরীফ হতে দূরত্ব ও হোটেলের মান অনুসারে ভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে। ঠিক একইভাবে মদিনাতেও। মসজিদে নববী হতে দূরত্ব ও হোটেলের মান বিবেচনায় ভাড়ার পরিমাণের হেরফের হয়ে থাকে। এই হোটেল ভাড়ার বাইরে মিনা ও আরাফায় তাঁবুতে অবস্থান ও সেখানে অবস্থানকালে সরবরাহকৃত খাবারের জন্য সেবা প্রদানকারী কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। বাকি সময়ের জন্য খাবার বাবদ বাংলাদেশি টাকায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। পরিবহণ, আবাসন এবং খাদ্য- এই তিন খাতে খরচের বাইরে ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবীমা, হজ গাইড, জমজমের পানি, প্রশিক্ষণ প্রভৃতির জন্য নির্ধারিত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
হজযাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে ডেডিকেটেড ফ্লাইট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরূপ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে বিধিবদ্ধ কিছু নিয়মও আছে। সেই নিয়ম-নীতি অনুসরণ করেই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়। হজ ফ্লাইটে হজযাত্রী ব্যতীত অন্য কোনো যাত্রী পরিবহণের সুযোগ নেই। সেকারণেই হজে যাওয়ার সময় বিমানে যাত্রী পরিপূর্ণ থাকলেও ফেরত আসতে হয় যাত্রীশূন্য অবস্থায়। একই চিত্র দেখা যায় হজ পালন শেষে দেশে ফেরত আসার সময়ও। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হজ ফ্লাইটে জনপ্রতি ভাড়া বেশি পড়ে। বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস-এই তিনটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের হজযাত্রী পরিবহণ করে। এ তিনটি এয়ারলাইন্সের ভাড়া সমান। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যৌথভাবে যে বিমান ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে সেই ভাড়াতেই অন্য দুটি এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহণ করে।
বিগত কয়েক বছর হজযাত্রী পরিবহণে বিমানভাড়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়া অনেক বেশি বলে পত্র-পত্রিকা কিংবা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রচারিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবছর হজ প্যাকেজ ঘোষণার পূর্বে বাংলাদেশ বিমান, সাউদিয়া ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সাথে কয়েকদফা মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সভায় ধর্ম উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। প্রথম সভাতেই বাংলাদেশ বিমান ভাড়া কমানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানায়। পরবর্তী সভায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স গতবারের তুলনায় প্রায় ২০ হাজার টাকা কমিয়ে বিমান ভাড়া প্রস্তাব করে। বিমানের এপ্রস্তাবে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সভায় উপস্থিত সদস্যগণ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে ভাড়া আরো কমানোর অনুরোধ জানান। সর্বশেষে এবছর হজযাত্রী পরিবহণে বিমান ভাড়া চূড়ান্ত হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা যা গতবারের তুলনায় ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কম। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, এবছর কোলকাতা থেকে হজযাত্রীদের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৫ রুপি যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৩৬ টাকার সমপরিমাণ যা বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা বেশি। এবছর কোলকাতার একজন হজযাত্রীকে হজব্রত পালনের জন্য প্রয়োজন হবে ৫ লাখ ০৯ হাজার ১৫১ টাকা (সৌদি রিয়াল ৩১.৭৭ টাকা হিসেবে)। ভারত সরকার মক্কায় তাদের হাজিদের আবাসনের ব্যবস্থা করবে আজিজিয়ায়। হোটেলের অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশি হাজিরা ভারতের হাজিদের চেয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার হারাম শরীফের দিকে এগিয়ে থাকবেন। ভারতের হজযাত্রীরা শুধু মিনা ও আরাফায় ‘সি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস উপভোগ করবেন যেখানে বাংলাদেশের হাজিরা ‘ডি’ ক্যাটাগরির সার্ভিস পাবেন। ২০২৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার হাজিদের হজব্রত পালনে ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ১০ হাজার ২৮৬ রুপিয়া যা বাংলাদেশি টাকায় ৭ লাখ ৯ হাজার ৯১৮ টাকার সমান (১ রুপিয়া=.০০৭৬ টাকা হিসেবে)। গতবছর মালয়েশিয়ার হাজিদের হজব্রত পালনে খরচ করেছে ৩৩ হাজার ৩০০ রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি টাকায় ৯ লাখ ২০ হাজার ৭৪৫(১ রিঙ্গিত=২৭.৬৫ হিসেবে)। তবে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের একজন হাজি ৪ লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকায় হজ পালন করেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতোই পাকিস্তানের হাজিদের আবাসন ছিলো আজিজিয়ায়।
হজ প্যাকেজ ঘোষণার প্রাক্কালে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সকল অংশীজনের মতামত, বিভিন্নখাতে খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য সকল ধরনের ব্যয় বাস্তবভিত্তিক ও যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে এবছরের হজের প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলেন, হজের প্যাকেজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিলো না, চেষ্টার কোনো কমতি ছিলো না। তারপরও অনেকে আন্তরিকতা ও চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আমাদের মনে রাখা দরকার, যেসকল সেবা অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করতে হয় সেখানে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতা দু’জনের উইন-উইন পরিস্থিতিতেই সেবামূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে হজের ক্ষেত্রে সেবামূল্য নির্ধারণের এইসূত্র সর্বদা প্রয়োগযোগ্য নয়। বিশেষ করে মিনা ও আরাফার জোনভিত্তিক তাঁবুর সার্ভিস চার্জ, তাঁবু ভাড়া, স্বাস্থ্য বীমা, জমজমের পানি, ইলেকট্রনিক সার্ভিস প্রভৃতি সেবামূল্য সকল দেশের জন্যই সমান। এসকল খাতে দর কষাকষির সুযোগ নেই। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিমান ভাড়া ও হোটেল ভাড়া কমানোর মাধ্যমেই হজ প্যাকেজমূল্য সুলভ ও সাশ্রয়ী করেছে। আর হোটেল ভাড়া কমানোর একমাত্র কৌশল হলো হারাম শরীফ থেকে দূরবর্তী স্থানে আবাসনের ব্যবস্থা করা। আর এ কারণেই সরকার ঘোষিত সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে হারাম শরীফের বহির্চত্বর থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে।
এবছর হজ প্যাকেজে খাবারের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত না করার বিষয়টিকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের প্রয়াস চালাচ্ছেন। একারণে খাবারের টাকার বিষয়টি সুস্পষ্ট করা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। সরকারি মাধ্যমে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হজব্রত পালন করেছেন এমন হজযাত্রীদের নিশ্চয় মনে আছে, সরকার হজ প্যাকেজে খাবারের ব্যয় বাবদ যে পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে সেই পরিমাণ টাকা হজে যাওয়ার প্রাক্কালে আশকোনা হজক্যাম্পেই হাজিদেরকে ফেরত প্রদান করা হয়। একজন হজযাত্রী তার রুচি ও পছন্দ মতো যেন খাবার খেতে পারে সেকারণেই মূলত সরকার খাবারের টাকা হাজিদের হাতে তুলে দিত। হাজিদের নিকট থেকে গৃহীত খাবারের টাকা পুনরায় হাজিদেরকে ফেরত প্রদানের বাড়তি একটি ধাপ পরিহার করে হজ ব্যবস্থাপনাকে সহজ করার লক্ষ্যেই মূলত এবছর খাবারের টাকা হজ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সেবা প্রক্রিয়া সহজীকরণের মাধ্যমে হাজিদেরকে হয়রানিমুক্ত ও উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই হজ প্যাকেজে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আর কোরবানীর টাকা অনেক বছর পূর্ব থেকেই হজ প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়না।
সরকারের দৃঢ় মনোভাব ও যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এবছর বিমান ভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমেছে। রাজস্ব বোর্ডও হাজিদের জন্য বিমান টিকিটের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। সৌদি রিয়ালের দাম গতবারের তুলনায় ২.৭৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় সঙ্গতকারণেই হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান যাতে সুলভে হজ পালন করতে পারে সেলক্ষ্যে সরকার হাজিদের আবাসন ও সেবায় কিছুটা পরিবর্তন এনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। হজ প্যাকেজমূল্য গতবছরের তুলনায় কমিয়ে জনগণের সাধুবাদ কুড়ানো সরকারের লক্ষ্য নয়। যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত হজ প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে এদেশের হজযাত্রীদেরকে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করাই সরকারের মূল্য লক্ষ্য।
লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
পিআইডি ফিচার