সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় কোম্পানি গঠনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে ‘কোস্টাল শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আইন ২০১৫-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ’ নামে একটি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাবেও সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের হাতে। আর কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্ব পাবে ‘নিউক্লিয়ার পাওয়ার কোম্পানি অব বাংলাদেশ’। তিনি জানান, আইনে বিদ্যুেকন্দ্র পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের বিধান, কোম্পানি পরিচালনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ ভূমিকা এবং পারমাণবিক প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশের (রাশিয়া) ভূমিকার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অন্যান্য কোম্পানির মতো এ কোম্পানির একটি বোর্ড থাকবে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে নিরাপত্তার বিষয়টি আইনে আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নীতিমালা মেনেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার সময়ই নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। রাশিয়া পারমাণবিক বর্জ্যও নিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে সংসদে প্রস্তাবও পাস করা হয়, গঠন করা হয় একটি জাতীয় কমিটি। ওই বছরই রাশিয়ার সঙ্গে একটি কাঠামো চুক্তি করে সরকার এবং ২০১১ সালের নভেম্বরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশ চুক্তি করে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে পাবনার রূপপুরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই ইউনিটে দুই হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২১ সালের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা রাশিয়ান ফেডারেশন দেবে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে। ২০১৩ সালের মার্চে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হবে বলে জানান তিনি।
উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি অনুমোদন : ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভারতের সঙ্গে অনুস্বাক্ষরিত ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন কোস্টাল শিপিং অ্যাগ্রিমেন্ট’ খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর চুক্তিটি এখন স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। আশা করা যাচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ সফরে এলে চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে, এমন একটি পরিকল্পনা আছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরের সমুদ্র ও নদীপথ ব্যবহার করতে পারবে। পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে দুই দেশ সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। এই চুক্তির মেয়াদ হবে ৫ বছর। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তি নবায়ন হবে। কেউ চুক্তি বাতিল করতে চাইলে ৬ মাস আগে নোটিস দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ও ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্যবাহী জাহাজ আসতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ সময় লাগে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যে যাওয়া-আসা সম্ভব হবে।