সিলেটপোস্ট রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে নিখোঁজ হওয়া দলের নেতাদের নিয়ে আবারও সরব হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
রোববার বিকেলে গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য এক বিবৃতিতে নিখোঁজ নেতাদের নিয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। শনিবারও চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়ও তিনি সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার প্রসঙ্গটি তুলে বক্তব্য রাখেন।
রোববারের বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপির অন্যতম নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকেরা ধরে নিয়ে যাওয়ার পর দুই মাস পেরিয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।’
নিখোঁজদের একটি তালিকা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেনে, ‘শেখ হাসিনার লাগাতার দুই আমলে বিএনপির অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম, সাবেক সংসদ সদস্য লাকসাম বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুন কবির পারভেজ এবং ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন ও সিলেটের ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিদারসহ বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মীকে বলপূর্বক গায়েব করে ফেলা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন তাদেরকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ দিনেও তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। জানা যায়নি তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘গুম করে ফেলা এসব নেতাকর্মী ও নাগরিকদের স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনের ফিরে আসার প্রত্যাশায় উৎকণ্ঠার প্রহর যাপন করছেন। তারা জানেন না তাদের নিখোঁজ স্বজনেরা আটক অবস্থায় বিনাবিচারে হত্যার শিকার হয়েছেন কি না। খুনের শিকার হয়ে থাকলে সেই খুনের বিচার দূরে থাকুক, লাশটি পর্যন্ত তারা পাননি। জানতে পারেননি মৃত্যুর তারিখটিও। সুযোগ পাননি প্রিয়জনের লাশ দাফন, কবর জিয়ারত কিংবা মৃত্যু দিবসে দোয়া খায়ের ও মাগফিরাত কামনা করার।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই পটভূমিতে সালাহ উদ্দিনের জন্য তার পরিবারের এবং আমাদের সকলের উৎকণ্ঠা দিন দিন আরো গভীর হচ্ছে। আমরা বারংবার তাকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি করে আসছি। তার স্ত্রী, প্রাক্তন সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার আবেদন করছেন তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে নিষ্ঠুর কটাক্ষ করলেও তাকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো উদ্যোগ নেননি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে তার স্ত্রী থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়া হয়নি। যদিও পুলিশ নিজে থেকে একটা জিডি করেছে, কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও তার সন্ধান আজো দেয়া হয়নি।’
নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সালাহ উদ্দিন বিএনপির মতো একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ নাগরিককে দীর্ঘদিন গায়েব করে রেখে যদি সরকার ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসন নির্বিকার থাকতে পারে তাহলে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়? দেশে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিকতা কি বিলুপ্ত হয়ে গেছে? কাউকে কি কখনো কোনো কিছুর দায় নিতে বা জবাবদিহি করতে হবে না?’
সালাহ উদ্দিনের সন্ধান চেয়ে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘আমি আবারো দাবি জানাচ্ছি, সালাহ উদ্দিনকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হোক। দাবি করছি, সকল নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। দাবি জানাচ্ছি, সর্বস্তরে স্বেচ্ছাচারিতার বদলে আইনের শাসন ও প্রাতিষ্ঠানিক রীতি-নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হোক। আইনের প্রয়োগ, তদন্ত ও বিচারিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ও নিয়ম-নীতি ফিরিয়ে আনা হোক।’
এর আগে শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ র্যাবের কাছেই আছে আর এ প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। তাই অবিলম্বে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে তার ফলাফল ভালো হবে না।