নিজস্ব প্রতিবেদক : লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের আড়াই মাসের মাথায় সিলেটে অনন্ত বিজয় দাশ নামে আরেক ব্লগারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যিনি নিজেও মুক্তমনা ব্লগে লিখতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চে যুক্ত ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে সিলেটের সুবিদবাজার এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে একই কায়দায়, যেভাবে গত ৩০ মার্চ ঢাকার বেগুনবাড়িতে অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুবিদবাজারস্থ দস্তীদারদিঘীরপাড় (নূরানী দিঘিরপাড়) এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অনন্ত বিজয় সুবিদবাজার নূরানী ১০/১২ নম্বর বাসার রবীন্দ্র কুমার দাসের ছেলে। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ সিলেটপোস্টকে জানান, পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা অনন্ত বিজয় দাশ সকাল ৯টার দিকে সুবিদবাজারের বনকলাপাড়া এলাকায় তার বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যাওয়ার সময় হামলার মুখে পড়েন।
“চার অস্ত্রধারী তাকে কুপিয়ে আহত করে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
৩০ বছর বয়সী অনন্ত বিজয় ছিলেন সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক। অভিজিতের ব্লগ মুক্তমনায় লেখার পাশাপাশি অনলাইনে তিনি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ও যুক্তিনির্ভর লেখালেখি করতেন। ২০০৬ সালে তিনি মুক্তমনা র্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান।
অনন্ত বিজয় সিলেট থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান বিষয়ক ছোটকাগজ ‘যুক্তি’ সম্পাদনা করতেন। ‘সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব: লিসেঙ্কো অধ্যায়’, ‘জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ’, ‘ডারউইন: একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা’ শিরোনামে তিনটি বইও রয়েছে তার।
নিহতের বোন পঞ্চতপা দাস সিলেটপোস্টকে বলেন, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে যোগ দেন।
এদিকে নিহত হওয়ার আগের দিনই অভিজিৎ ও ওয়াশিকুর হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের ফেইসবুক পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট দেন অনন্ত বিজয়।
সেখানে লেখা হয়, “অভিজিৎ রায়কে যখন খুন করা হয়, অদূরেই পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছিল। খুনিরা নিশ্চিন্তে খুন করে চলে গেল। পরে পুলিশ বলে তাদের নাকি দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। বড় জানতে ইচ্ছে করে তাদের দায়িত্বটা আসলে কী!
ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে যখন খুন করে খুনিরা পালিয়ে যাচ্ছিল তখনও কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু পুলিশের কপাল খারাপ, তারা বলতে পারলে না- এক্ষেত্রেও তাদের কোনো দায়িত্বে অবহেলা ছিল না। কারণ, লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানবিক মানুষ খুনিদের ধরে ফেলেন। খুনিদের শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেন।”
আর মঙ্গলবার সকালে হামলার শিকার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তার সর্বশেষ পোস্ট আসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদের প্রকাশ্যে চাবুক মারার ইচ্ছা প্রকাশ মন্তব্য নিয়ে।