সিলেটপোস্টরিপোর্ট:ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট ভারতের মেঘালয়ে পলাতক সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করার জন্য দেশটিতে তাদের ইউনিটের কাছে রেড নোটিশ পাঠিয়েছে।ভারতের শিলংয়ে আটকের পর যিনি নিজেকে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলে দাবি করেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস থেকে ভারতীয় পুলিশকে একটি রেড নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে খবর দিয়েছে কলকাতার একটি দৈনিক। মেঘালয় পুলিশের মহা পরিচালক রাজীব মেহতাকে উদ্ধৃত করে কলকাতার ইংরেজি দৈনিক টেলিগ্রাফ বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে এরই মধ্যে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা। যাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট গত মঙ্গলবার সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করার জন্য বার্তাটি পাঠায়। বার্তাটি মেঘালয়ে পৌঁছালে সেই মোতাবেক ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)কে জানানো হয়। মেঘালয়ের পুলিশ প্রধান রাজিব মেহতাকে উদ্ধৃত করে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।মঙ্গলবার সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ভারতের মেঘালয় থেকে তার স্বামী ফোন করেছেন, এমন খবর সাংবাদিকদের জানানোর পরপরই ঢাকায় ইন্টারপোলের ইউনিট তাদের ভারতীয় ইউনিটের কাছে গ্রেপ্তারের ওই নির্দেশনা পাঠায়।এর আগে সোমবার সকালে মেঘালয় পুলিশ সালাউদ্দিনকে সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য আটক করে। এসময় তার কাছে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করার মতো কোনও ডকুমেন্টই ছিলো না।ভারতে প্রবেশের কোনও অনুমতি সাথে না থাকায় মেঘালয় পুলিশ তাকে ফরেনারস অ্যাক্টে আটক দেখাচ্ছে। রাজিব মেহতা অপর একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইন্টারপোলের ঢাকা অফিস ভারতের কাছে একটি রেড কর্নার নোটিশ পাঠায় যাতে সালাহউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।সিবিআইকে এই নোটিশের বিষয়ে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।সালাহউদ্দিন আহমেদ মেঘালয়ের শিলং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা তাকে এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ বলে জানিয়েছেন। তবে কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে তাকে কবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হবে।অন্যদিকে মেঘালয় সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা বলছেন, সালাহউদ্দিন আহমেদের আসল পরিচয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কাছে জানা নেই। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবেছাড়া পেলে তাকে আদালতে হাজির করানো হবে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা এম খারকারাং।রাজীব মেহতা টেলিগ্রাফকে বলেছেন, সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা থাকার কথা জানিয়ে ইন্টারপোলের ঢাকা ইউনিট থেকে ওই অনুরোধ পাঠানো হয়েছে।টেলিগ্রাফকে তিনি বলেন, আমরা বুধবার ভারতের সিবিআইয়ের মাধ্যমে ওই নোটিস হাতে পেয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে সিবিআইকে আমাদের উত্তর দিয়েছি। ইন্টারপোলের আট ধরনের নোটিসের মধ্যে রেড নোটিস জারির অর্থ হলো ওই ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচারের মুখোমুখি করতে অথবা দণ্ড কার্যকর করার জন্য খুঁজছে।এক্ষেত্রে ইন্টারপোল কেবল অবস্থান সনাক্ত করে সেই তথ্য জানায়। গ্রেপ্তারের কাজটি করতে হয় সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশকে। আর দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নির্ভর করে দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগের ওপর। বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান শহিদুল হক বলেন, ইন্টারপোল শুধু অপরাধীর অবস্থান জানিয়ে থাকে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারা সালাহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছেন ।তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন,তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।এ অবস্থায় সালাহ উদ্দিনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়ে আসার এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার খবর দেয় তার পরিবার।গত ১০ ম রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।অন্তর্ধানের দুই মাস পর মঙ্গলবার ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে হদিস মেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের। তার স্ত্রী হাসিনা জানান, শিলংয়ের হাসপাতাল থেকে তিনি স্বামীর ফোন পেয়েছেন।অন্যদিকে শিলং পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, সঙ্গে কাগজপত্র না থাকায় তারা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছে।অসংলগ্ন আচরণের কারণে বাংলাদেশের এই সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হলেও পরে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিন দাবি করেছেন, গত ১০ মার্চ অচেনা এক দল লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর থেকে আর কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না। সিলেট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের শিলংয়ে কীভাবে এলেন, তাও তিনি বলতে পারেননি।ওই হাসপাতালে সালাহ উদ্দিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকায় এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে পারেনি মেঘালয় পুলিশ। ফলে প্রাথমিকভাবে সালাহ উদ্দিন যে তথ্য দিয়েছেন তা থেকে কোনো দিশা পাচ্ছেন না তারা। মেঘালয়ের পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা আশা করছি, শিগগিরই তাকে আদালতে হাজির করতে পারব। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে আমরা তাকে ফেরত পাঠাতে চাই।
সালাহউদ্দিনকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ
সিলেট পোস্ট ২৪ ডট কম
: মে ১৫, ২০১৫ | ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
« « পূর্ববর্তী
পরবর্তী » »