সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট: ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল। সেই রাতেই হলো সর্বনাশ। ওই দিনই ধসে পড়ে ফিনল্যান্ড প্রবাসী ফ্যান্সি খানমের নতুন স্বপ্ন ও প্রত্যাশাটি। সেই ভয়াল রাতে স্বামীর হিংস্র থাবার শিকার থেকে যখন চিৎকার করছিলেন ফ্যান্সি। তখন ফিনিশ টহল পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাকে।বিয়ে নামটা উচ্চারণ করতেই শিউরে ওঠে ফ্যান্সির সমস্ত শরীর। ভয়ঙ্কর বিয়ে নামক এই ট্র্যাজেডি ফ্যান্সির গোটা ধর্মবুদ্ধি ও বিবেককেই কাঁপিয়ে দেয়। বিয়েটা তার কাছে সে এক বিভীষিকার গল্প।
এখনো সেই বিভীষিকার কথা মনে পড়লেই আঁতকে ওঠে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মেয়ে ফ্যান্সির। সেই স্মৃতি এখনও তাড়া করে তাকে।
ফিনল্যান্ডে এসে স্বামীর হাত ধরেই স্বচ্ছলতার দিকে এগিয়ে চলতে চেয়েছিল এই ফ্যান্সি খানম। কিন্তু নিমিষেই সেই স্বপ্ন হারিয়ে যায় তার।তার জীবন যখন বাধার ঝঞ্ঝায় ক্ষতবিক্ষত। জীবনের নানা দুঃখ, বঞ্চনা ও অসঙ্গতি সহ্য না করতে পেরে নিজেকে ঠেলে দিতে চেয়ে ছিলেন এক কঠিন গন্তব্যে।আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। স্বামীর অসহ্য মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি মনে হয়েছিল তখন। এখানেই নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন ফ্যান্সি।আজও ফ্যান্সী জানেন না, কেন তার ওপর বিগত ছয় মাস পাশাবিক ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালানো হয়েছিল। কলঙ্কের চেহারা নিয়ে অনেকদিন ঘরেই ছিলেন। বাইরে যেতেন না। এক সময় ফ্যান্সীর মনে হলো, ‘এভাবে ঘরের কোণে পড়ে থাকার মানে হয় না। জীবন এগিয়ে চলে। আমাকেও বেরোতে হবে।’
এসময় ২/৩ টি ফিনিশ পরিবার আর স্থানীয় কয়েকটি মানবধিকার সংস্থার সহায়তায় আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ফ্যান্সি খানম।তবে বিভীষিকাময় জীবন ফিনল্যান্ড প্রবাসী ফ্যান্সি খানমকে আটকে রাখতে পারেনি। বাধার ঝঞ্ঝা পেরিয়ে তিনি এখন ফিনিশ সমাজের একজন আলোকবর্তিকা।ফ্যান্সিকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও দোষীকে শাস্তির দাবী ফিনিশ মানবধিকার সংস্থার গুলির।এখন ফ্যান্সি জানেন, তিনি আর একা নন এবং ভালোই আছেন। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মাথার ও শরীরের ক্ষতস্থান পুরোপুরি সারিয়ে আগের জীবনে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।নিজের ভাবনা ও ফিনল্যান্ডের বিগত কয়েক মাসের যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে কিংবা গল্প করতে গতকাল বুধবার ইতালী গিয়েছেন ফ্যান্সি তার ৭ বছরের মেয়ে ইয়াশাকে নিয়ে। মাস খানেক পর আবার ফিনল্যান্ডে ফিরবেন তিনি।
উল্লেখ্য গত ২৩শে এপ্রিল ইতালী প্রবাসী ফেন্সী খানমকে (৩০) ধর্ষণের দায়ে ফিনল্যান্ড বিএনপি নেতা কামরুল হাসান ওরফে জনিকে আটক করে ফিনিশ টহল পুলিশ।এ ঘটনায় ভিকটিম ফেন্সী বাদী হয়ে হেলসিংকির পাসিলা পুলিশে একটি মামলা দায়ের করেন।
জনির নিজ বাসায় নিয়ে জোরপূর্বক ভয়ের মুখে তাকে ধর্ষণ করে।ওই প্রবাসী ফেন্সী খানমের ডাক্তারি পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।ধর্ষণকারী কামরুল হাসান জনি গত বছরের ১২ অক্টোবর ফেন্সীকে প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় মৌলভী সাহেব ডেকে কোন রকম সরকারী নিবন্ধন ছাড়া হেলসিংকিতে ঘনঘটা করে প্রবাসী বন্ধুবান্ধব নিয়ে তাদের বিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বিয়ের পরে ওই তরুণী তাদের বিবাহকে ফিনিশ আইনে রেজিষ্টারের জন্য পীড়াপীড়ি করলে জনি তাতে অস্বীকৃতি জানায়।নিরাপত্তা জনিত কারণে বর্তমানে ফেন্সী খানম ও তার ৭ বছরের মেয়ে ইয়াশাকে স্থানীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত একটি সেভ হোমে রাখা হয়।