সিলেট পোষ্ট রিপোর্ট : আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এবার ছিটমহলের অধিবাসীদেরও তথ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার একটি কমিশন বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় স্থল সীমান্ত বিল সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। গত শনিবার ঢাকা সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সীমান্ত চুক্তির দলিল বিনিময় হয়। এর মধ্যে দিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ছিটমহলবাসীদের নাগরিক স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত ৪১ বছর ধরে তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তির পর দলিল হস্তান্তর হওয়ায় ছিটমহলবাসীদের নাগরিক স্বীকৃতির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই ঈদের পরে শুরু হতে যাওয়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সুত্র থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ১০ মার্চ ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রমে ছিটমহলবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল ইসি। এর অংশ হিসেবে এপ্রিল মাসে ছিটমহলগুলোয় প্রবেশে ভারত সরকারের অনুমতির জন্য পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় কমিশন। এ ছাড়া কমিশন থেকে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তৎকালীন কমিশনের চিঠির জবাবে দুই মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ছিটমহল বিনিময় বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। ছিটমহল বিনিময় নিষ্পত্তি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটারদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
কমিশন আসন্ন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের তালিকায় নাম ওঠানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ জরিপ অনুযায়ী দুই দেশের বিনিময়যোগ্য ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহলের সংখ্যা ৫১টি। তার মধ্যে ৩৪টিতে জনবসতি রয়েছে। এর মোট আয়তন সাত হাজার ১১০ একর।
ওই ৫১ ছিটমহল হচ্ছে দিনহাটায় ২২টি, মেখলাগঞ্জে ১১, মাথাভাঙ্গায় ১২, ও শীতলকুচিতে ৬টিসহ মোট ৫১টি। এগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ছিটমহলের সংখ্যা ১১১টি। এগুলোর মোট আয়তন ১৭ হাজার ১৫৮ একর। বাংলাদেশে ভারতের ১১১ ছিটমহল হচ্ছে পঞ্চগড় সদরে ৭টি, বোদায় ২৫, দেবীগঞ্জে ৪, নীলফামারীর ডিমলায় ৪, লালমনিরহাট সদরে ২, হাতীবান্ধায় ২, পাটগ্রামে ৫৫, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গমারীতে ১ ও ফুলবাড়ীতে ২টিসহ মোট ১১১টি। বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের যৌথভাবে পরিচালিত জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ছিটমহলে জনসংখ্যা ১৪ হাজার। অন্যদিকে ভারতীয় ছিটমহলের জনসংখ্যা ৩৭ হাজার।