সিলেটপোস্টরিপোর্ট:সমাজে খাঁটি মানুষের আকাল যুগে সিলেটের ওসমানীনগরের এক নারী ‘অস্ত্র নয় কলম ধর-শিক্ষা নিয়ে জীবন গড়’ এই শ্লোগানকে পুঁজি করে সমাজকে সুশিক্ষিত করার ব্রতে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রচার বিমুখ এ মহিলা একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও নিজেকে রেখেছেন নিভৃতচারী হিসেবে।ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের খালিকুর রহমানের স্ত্রী আয়শা খানম ১৯৭০ সালে এসএসসি পাশ করার পর পড়াশুনায় থাকাবস্থায় ১৯৭২ সালে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। পারিবারিক কারনে নিজে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেও এলাকার কোমলমতি শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো বিকিরণে তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চষে বেড়িয়েছেন থানার বিভিন্ন এলাকায়। কমলমতি শিশুদের কল্যানে নিয়োজিত হয়ে যুক্ত হয়েছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের সাথে।রাজনীতি বিমুখ আয়শা খানম ইতিমধ্যে আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের মহিলা সম্পাদিকা, সিলেট বিভাগ জন স্বার্থ সংরক্ষন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য, মোল্লাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পত্যাশা স্টুডেন ওয়েল ফেয়ার এডুকেশন ট্রাষ্ট্রের উপদেষ্টা, মোল্লাপাড়া হাজি ছইদ মিয়া কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের উপদেষ্টা,কঠাল পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য সহ একাধিক সমাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। একাধিক সম্মননা সনদ অর্জন করেছেন। থানার শিক্ষা বিস্তারে আয়শা খানমের এ প্রচার ইতিহাসের পাতায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে জানান এলাকার সচেতন মহল মহল ।২০১৩ সালের আয়শা খানমের প্রথম লেখা কবিতার বই ‘অস্ত্র নয় কলম ধর’ প্রকাশ পায়। এ বই লেখা হয়েছে শিক্ষাকে উপজীব্য করে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তৎকালিন সিলেটের অতিরিক্ত ডিআইজি অব পুলিশ সাখাওয়াত হোসেন আয়শা খানমের ফুলের সুবাস কবিতার কয়েকটি লাইন ‘কহিল কস্তুরী আমি আতর দান নহি, গুলিস্তানও নহি, আমি অতি নিছক মাটি ফুলের সহিত থাকিয়া তাহার সুবাসে হয়েছি খাঁটি’ উল্লেখ করে বলেছিলেন, নিভৃত পল্লীর বাসিন্দা আয়শা খানমের এলাকায় শিক্ষা প্রসারে ভূমিকা ও সামাজিক উন্নয়নে কর্মতৎপরতা উৎসাহ ব্যঞ্জক। তিনি নিজেকে একজন মহিয়সী নারী রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন।বালাগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (বর্তমানে দক্ষিন সুরমা উপজেলায়) কর্মরত গকুল চন্দ্র দেবনাথ তাঁর লিখা কবিতা দীপ্ত শপথ এর চারটি লাইন ‘অন্যায়ের-অসত্যোর কাছে কভূ নত করিব না শির,ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর’ উল্লেখ করে বলেন, নিভৃতচারী আয়শা খানমের শিক্ষা বিস্তারে লড়াই অবশ্যই সমাজ ও জাতির কাছে স্বরনীয় হয়ে থাকবে। আমি দেখেছি এ উপজেলার প্রায় প্রতি বিদ্যালয়ে নিজ উদ্যোগে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে আলোচনা করে কিভাবে ছোট ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলা যায় সে লক্ষে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।এ ব্যাপারে প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাতে আয়শা খানম বলেন, কোন প্রাপ্তির আশায় নয়, নিজস্ব দায়বোধ থেকেই শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষার প্রসারে তিনি তার পরিবারের সবার উৎসাহ ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক মানুষের সাহায্য পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কোন উদ্যোগ কখনোই ব্যর্থ হয় না, যদি উদ্যোক্তার উদ্যোগটি ভুল না হয়। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সমাজের শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যাওয়ায় জন্য সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। এই নিভৃতচারী আয়শা খানম ১৯৫৬ সালের ১৯ নভেম্বর উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম শাহ আব্দুস সামাদ ও মাতার নাম হালিমুন নেছ্ছা খাতুন। তিনি নিজেকে একজন মহিয়সী নারী রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন।