সিলেটপোস্টরিপোর্ট:জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর দাফন নিজ নিজ শহরে সম্পন্ন হয়েছে।
মুজাহিদের বড় ভাই ও ফরিদপুর জামায়াতের আমীর আলী আফজাল মো. খালেছ জানান, সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে মুজাহিদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত আইডিয়াল মাদ্রাসার গেটের বাইরের ডান পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে।
রোববার ভোর ৬টা ৩৭ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তায় ঢাকা থেকে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি খাবাসপুর আইডিয়াল মাদ্রাসায় পৌঁছে। আইডিয়াল মাদ্রাসায় শনিবার রাত থেকে মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা অবস্থান করছিলেন। লাশ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে জানাজা শেষে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।মুজাহিদের বড় ভাই আরও জানান, ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে অনুষ্ঠিত জানাজায় পরিবারের সদস্য ছাড়া স্থানীয় জামায়াতের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। তবে বাইরের কাউকে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
জানাজা পড়ান মুজাহিদের বড় ভাই ও ফরিদপুর জামায়াতের আমির আলী আফজাল মো. খালেছএর আগে, কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ জানান, পরিবারের সদস্যদের মতামত নিয়ে পশ্চিম খাবাসপুরে মুজাহিদের প্রতিষ্ঠিত আইডিয়াল মাদ্রাসার গেটের বাইরের ডান পাশে তার কবর খোঁড়া হয়।
এদিকে নিজ জন্মস্থান চট্টগ্রামের রাউজানের গহিরা গ্রামের পারিবারিক কবরাস্থানে দাফন করা হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দন্ড প্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে।কড়া পুলিশ প্রহরায় সাকার নিজ বাড়ির উঠানে সকাল সাড়ে ৯টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা পড়ান হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লাহ বাবু নগরী। জানাজায় সালাউদ্দিন কদেরের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
এর আগে শনিবার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার ২ ঘণ্টা পর লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। এ্যাম্বুলেন্সটি সকাল ৯টায় রাউজানে পৌঁছায়। লাশ পৌঁছানোর পরপরই সালাউদ্দিন কদেরের স্ত্রী এবং সন্তানরা লাশের ফের গোসল এবং গহিরা এওয়াইজেডএম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে পুলিশ গোসল এবং স্কুল মাঠে জানাজার অনুমতি দেয়নি। পরে বাড়ির উঠানেই জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।এদিকে সালাউদ্দিন কদেরের লাশ দাফনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রাত থেকে রাউজানের গহিরা ও আশপাশের এলাকায় ১০ প্লাটুন পুলিশ ও দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর লাশ প্রতিরোধে রাউজান উপজেলার প্রবেশ পথসহ বিভিন্ন পয়েন্টে মধ্যরাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয় বলে জানা যায়। তবে পুলিশের তৎপরতায় তারা সরে যায়।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সালাউদ্দিন কদেরের মরদেহ নির্বিঘ্নে পরিবহনের জন্য রাত সাড়ে ১০টার পর থেকে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী হয়ে রাউজান পর্যন্ত বিপুল সংখ্যক র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি মোতায়ন করা হয়। ১০টার পর সড়কে কাউকে অবস্থান করতে দেয়নি।
চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, নির্বিঘ্নে লাশ পরিবহন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ফাঁসি কার্যকরের প্রায় দুই ঘণ্টা পর রাত ২টা ৪৯ মিনিটে লাশবাহী চারটি এ্যাম্বুলেন্স কারা ফটক দিয়ে বের হয়ে আসে। এর একটিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর এবং অপর একটিতে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের লাশ রাখা হয়।
এ্যাম্বুলেন্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর সামনে ও পেছনে র্যাব ও পুলিশের দুটি করে গাড়ি রাখা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুন্ড-প্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে একই মঞ্চে পাশাপাশি ফাঁসিকাষ্ঠে কার্যকর করা হয়।
কেন্দ্রীয় কারাগারের আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন- আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন, এডিশনাল আইজি প্রিজন, জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, সিনিয়র জেল সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলার, সিভিল সার্জন, কারা চিকিৎসক, ডিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি, লালবাগ জোনের ডিসি ও র্যাবের প্রতিনিধি।
মৃত্যুদন্ডের চূড়ান্ত রায় রিভিউয়ে দুই যুদ্ধাপরাধীর আবেদন বুধবার সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ করে দেন। বৃহস্পতিবার রায় পৌঁছায় কারাগারে।