সিলেটপোষ্ট রিপোর্ট :অত্যন্ত মুখরোচক ও লোভনীয়। একইসঙ্গে পুষ্টিকরও। তাই বলে ইচ্ছেমত খাবেন? না, খাবার মুখরোচক ও পুষ্টিকর হলেই যে সব সময় তা উপকারী হবে তা নয়। কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো কখনো কখনো নেতিবাচক প্রভাবও ফেলে। এসব খাদ্যদ্রব্য দৃষ্টিভ্রম এমনকি শ্রবণের ক্ষেত্রেও ভ্রম তৈরি করে। কখনো কখনো এসব খাবার চেতনা সামান্য হ্রাস করে। এমন নয়টি খাবারের পার্শপ্রতিক্রিয়া কী, তা দেখা যাক।
মরিচ: খাবারকে মুখরোচক করতে মরিচের জুড়ি নেই। কাঁচা মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। তবে নতুন তথ্য হলো, মরিচ দৃষ্টিভ্রম উৎপাদনকারী। মরিচের উত্তেজক উপাদানটি মস্তিস্ক থেকে ইডোরফেন নামক হরমোনকে বিতাড়িত করে। এর ফলে মানুষের দৃষ্টিভ্রম হয়। দ্বিতীয়ত, উদ্ভিদবিদ্যা অনুয়ায়ী মরিচ তামাক জাতীয় উদ্ভিদ পরিবারের সদস্য।
জায়ফল: রন্ধন শিল্পে যারা পারদর্শী তাদের কাছে অতিপরিচিত একটি মসলার নাম জায়ফল। খাবারের স্বাদ আর সুগন্ধ বৃদ্ধি করতে এবং মাংস নরম করতে যার জুড়ি নেই। এছাড়াও জায়ফলের একটি যুগান্তকারী গুণ হল মুখমণ্ডলে ব্রণের চিকিৎসায় এর ব্যবহার। ব্রণের মূল কারণ হলো, মুখের ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাংগাসের আক্রমণ। জায়ফলের মধ্যে ‘মেইস’ নামের একটি উপাদান রয়েছে যা ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী। তবে জায়ফলের নেতিবাচক ক্রিয়াও রয়েছে। দুই টেবিল চামচ জায়ফলের গুড়ো অথবা পাঁচ থেকে ১৫ গ্রাম জায়ফল খেলে ২৪ ঘণ্টা ধরে বমিবমি ভাব হতে পারে। অথবা সারাদিনের জন্য অস্বস্তিকর মাথা ব্যাথা ও দৃষ্টিভ্রমের কারণ হতে পারে। জায়ফলে মিরিসিটিসিন নামক এক ধরনের জৈব যৌগ রয়েছে, এর কারণে এমন হয়।
কফি: অধিকাংশ মানুষের কাজের সময় অথবা আড্ডায় চা বা কফি না হলে চলে না। অনেকের আবার কাজের সময় কফি পান না করলে মাথা ব্যথা শুরু হয়। তবে অতিরিক্ত কফি পান করলে আপনি ভূতুড়ে অনুভূতি অনুভব করবেন। যেমন কল্পিত কিছু শব্দ শুনতে পাবেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়, দিনে পাঁচ কাপ কফি পান করলে এমন হতে পারে। অতিমাত্রার ক্যাফেইন ভ্রান্তশ্রবণের কারণ।
স্টিলটন চিজ (পনির): স্টিলটন চিজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও উচ্চমাত্রার প্রটিনসমৃদ্ধ এক ধরনের পনির। স্টিলটন চিজ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি অত্যন্ত সুস্বাদু নীল রংয়ের অপরটি খুবই সুগন্ধী ও সাদা রংয়ের। তবে ব্রিটিশ চিজবোর্ড ২০০৫ সালে একটি গবেষণা করে। এর ফলাফলে দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ পুরুষ ও ৮৫ শতাংশ নারী ঘুমানোর আগে স্টিলটন চিজ খেলে অস্বাভাবিক ও বাজে স্বপ্ন দেখে।
তুঁতফল (মালবেরি): শিশুদের প্রিয় তুঁতফল। এটা খুব পুষ্টিকর। তবে অপরিপক্ক তুঁতফল খেলে মাথা ব্যাথা বা হাল্কা দৃষ্টিভ্রম হয়। এটি এক ধরনের রস তৈরি করে যা স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দিপ্ত করে। এর ফলে দৃষ্টিভ্রম ঘটে বা বিভ্রান্ত হয় মানুষ।
পোস্তাদানা: পোস্তাদানা মূলত পপি ফুলের বীজ। এটি এক ধরনের তেল বীজ। এছাড়াও এতে মরফিন বা আফিম থাকে। এ কারণে মাত্রাতিরিক্ত পোস্তদানা খেলে মানুষ নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অল্প পরিমাণ খেলে কোনো সমস্যা নয় তবে বেশি পরিমাণে খেলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে।
রাইয়ের রুটি: রাই এক ধরনের শষ্যদানা। এতে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা নেশার উদ্রেক করে। ক্লান্ত অবস্থায় রাইয়ের রুটি খেলে শরীরে ঝিম ধরে ও মানুষ নেশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া এতে মানসিক প্রভাব বিস্তারকারী এক ধরনের উপাদান থাকে। ফলে মানুষের দৃষ্টিভ্রম হয়।
ম্যাজিক মাশরুম: সব ধরনের মাশরুমে সিলোবিনি ও সিলোসিন নামে নেশার উদ্রেককারী এমন দুটি উপাদান থাকে। অ্যাজটেক (Aztecs) আদীবাসীরা এটাকে ‘ঈশ্বরের মাংস’ বলে। এটি নেশা তৈরি করে বলে তাদের বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবে এটাকে ব্যবহার করে।
সি-ব্রিম (কার্প জাতীয় সামুদ্রিক মাছ): সি-ব্রিম খুব সুস্বাদু এক ধরনের মাছ। যা মিঠা পানি ও সমুদ্র উভয় স্থানেই হয়। তবে সামুদ্রিক সি-ব্রিম খেলে দৃষ্টিভ্রম হয়। এ মাছ সামান্য নেশাচ্ছন্ন করে বলে রোমানরা আনন্দ উৎসবে এই মাছ খেয়ে থাকে। আর আরবরা এ মাছকে বলে ‘স্বপ্ন দেখানোর মাছ’।