সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে এক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে একাধিকস্থানে নিয়ে চারবছর ধর্ষনের পর আদালতে দায়েরকৃত মামলায় কাবিন দিয়ে বিয়ে করে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাধ করে স্ত্রীর অধিকার না দিয়ে উল্টো স্বামী নজরুল ইসলাম কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দিবে বলে প্রাণনাশের হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় ভূক্তভোগী নারী ও এলাকাবাসীর আয়োজনে সদর উপজেলার নিয়ামতপুর বাজারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন,ভূক্তভোগী নারী রুখসানা বেগম চৌধুরী।
রুখসানা বেগম চৌধুরী বলেন,২০১৬ সালে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলামের সাথে নিয়ামতপুরে ভোটকেন্দ্রে রুখসানা বেগম চৌধুরীর পরিচয় হয় । তখন থেকে মোবাইল ফোনে রুখসানার সাথে নজরুল ইসলামের কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত চারবছরে একাধিক স্থানে নিয়ে তাকে ধর্ষন করলে ও বিয়ে করবে বলে সময় কালক্ষেপন করতে থাকে।
পরবর্তীতে রুখসানা নজরুলের প্রতারনার কৌশল বুঝতে পেরে ২০২০সালের ১৫ই জুলাই তিনি নিজে বাদি হয়ে সুনামগঞ্জে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিশ্বম্ভরপুর জোনে নজরুল ইসলামকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ২২১/২০২০ইং তারিখ।
এই মামলাটির দায়িত্ব দেয়া হয় তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্বম্ভরপুর থানার এস আই মো. আমিনুল হককে। তিনি তদন্ত করে গত ২০/০৮.২০২০ ইং তারিখে বিজ্ঞ আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং বিজ্ঞ আদালত আসামী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আসামী নজরুল ইসলাম গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর পেয়ে রুখসানাকে একলাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ে করলে ও তাকে স্বামী নজরুলের বাড়িতে তুলে নেওয়া হয়নি। একই বছরের ১১ অক্টোবর আপোসনামার মাধ্যমে আদালতকে জামিন লাভ করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে ঘর সংসার করার ধারাবাহিকতায় যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেলে তিনি ২০২২ সালের ১২ই অক্টোবর পূনরায় সুনামগঞ্জে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বিশ্বম্ভরপুর জোনে স্বামী নজরুল ইসলামকে আসামী করে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১৪৮/২০২২ইং তারিখ।
এক পর্যায়ে সুচতুর স্বামী নজরুল ইসলাম কৌশলে রুখসানাকে স্ত্রীর ভরণপোষণসহ সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার প্রতিশ্রুতিতে ঐ মামলাটি ও আপোষে নিস্পত্তি করে নেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে স্ত্রী রুখসানাকে ফুসলিয়ে তার চাচারাসহ এক সাবেক ইউপি সদস্য আয়না মিয়াকে আসামী করাইয়া নাজেহাল করেন স্বামী নজরুল ইসলাম।
পরবর্তীতে সুকৌশলে স্বামী নজরুল ইসলাম তার স্ত্রী রুখসানাকে তালাক দিয়েছেন বলে এলাকায় অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
মানববন্ধনে নির্যাতিতা রুখসানা চৌধুরী দাবী করেন বিয়ের কাবিনের দেনমোহরের একলাখ টাকা,রুখসানার সৌদী আরব থেকে আনা বিদেশী মালামাল বাবত সাড়ে ৩ লাখ টাকা,নগদ ৮০ হাজার টাকাসহ মোট ১৪ লাখ টাকা স্বামী নজরুল ইসলাম আত্মসাধ করেছেন বলে তিনি দাবী করেন।
এদিকে গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলীর নিকট জমা রাখা ৮০ হাজার টাকা ও এখন আত্মসাধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে প্রতারক স্বামী নজরুল ইসলাম কর্তৃক স্ত্রী রুখসানাকে বেশী বাড়াবাড়ি করলে তালাক দিবে প্রাননাশের হুমকি অব্যাহত থাকায় তিনি গত ০৬/১০/২০২৩ইং তারিখে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন। তিনি স্ত্রীর অধিকার ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। অন্যাতায় প্রতারনার মাধ্যমে প্রতারক স্বামী নজরুল ইসলাম সহজ সরল স্ত্রী রুখসানার নিকট হতে বিভিন্ন সময়ে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাধেরকারণে তাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি আত্মসাধকৃত টাকাগুলো উদ্ধারের দাবী জানান।
মানববন্ধনে এ সময় বক্তব্য রাখেন,মো. রফিকুল ইসলাম,আলতাব আলী,আবু তাহের,মোস্তাফিজুর রহমান ও মাসুদা বেগম প্রমুখ।
এ ব্যাপারে রুখসানার স্বামী নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রুখসানার সাথে বিয়ের সত্যতা নিুিশ্চত করে জানান,এ বিষয় নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা ও হয়েছে।
এ ব্যাপারে গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী দীর্ঘদিনের একটি সম্পর্ক নজরুল ইসলাম ও রুখসানার মধ্যে ছিল এবং পরবর্তীতে রুখসানার দায়েরকৃত মামলায় নজরুল রুখসানাকে বিয়ে করেন। তবে চেয়ারম্যান শওকত আলীর নিকট রক্ষিত ৮০ হাজার টাকা নজরুল ইসলামকে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী রুখসানা বেগম চৌধুরী কর্তৃক অভিযোগ দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে এবং সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।