সিলেটপোস্ট ডেস্ক::আন্তর্জাতিক সীসা দূষণ প্রতিরোধ সপ্তাহ উপলক্ষে ‘শৈশব হোক সীসা দূষণমুক্ত’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে একটি জনসচেতনতা মূলক র্যালি ও সভার আয়োজন করে সিলেট জেলা সিভিল সার্জন অফিস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্বাস্থ্য ভবনের সম্মুখ থেকে একটি র্যালি বের হয়। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্বাস্থ্য ভবনে এসে শেষ হয়। র্যালিতে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে র্যালী পরবর্তী আলোচনা সভায় সভাপতিত্বে করেন সিলেট জেলার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত এবং সিলেট সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমদ সিরাজুম মুনীর। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন ইউনিসেফ সিলেট বিভাগীয় প্রধান কামরুল আলম, ইউনিসেফ কর্মকর্তা সাঈদ মিল্কী, ডা. মির্জা ফজলে এলাহি, ডা. নবজৌতি দেব।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, সীসা দূষন এটি নিরব ঘাতক হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। সীসা দূষণের কোন সুনির্ধারিত চিকিৎসা না থাকায় প্রতিরোধই হচ্ছে একমাত্র বাঁচার উপায়। তাই সম্মিলিত ভাবে সীসা দূষণ প্রতিরোধের উপর সমাজকে সচেতন করতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করার আহবান জানান।
র্যালী পরবর্তী আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বিশ্বে প্রতি তিন জন শিশুর একজন সীসা দূষণের শিকার। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় তিন কোটি পঞ্চাশ লক্ষ শিশুর রক্তে সীসার মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার এর বেশি। আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ আক্রান্ত দেশ।
ইউনিসেফ এর সহায়তায় আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে ২০২২ সালে সিলেটের ২৪৮ জন বাচ্চার রক্তে সীসার মাত্রা পরিমাপ করা হয়। পরীক্ষায় প্রত্যেকের নমুনায় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া যায় যেখানে গড় মাত্রা ছিল ৮.৩ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটার যা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকার জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি কর্তৃক নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। রক্তে সীসার কোন নিরাপদ মাত্রা নেই, অর্থাৎ যেকোন পরিমান সীসার উপস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অনুষ্ঠানে জানানো হয় শিশুরা সবচেয়ে বেশি সীসা দূষণের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই আর নিরাময় করা সম্ভব নয়। সীসা দূষণের ফলে শিশুদের নানান শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আইকিউ কমে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। সীসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি গর্ভবতী মহিলার পাশাপাশি তার গর্ভের ভ্রুণকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।এর ফলে বাচ্চার ওজন কম হওয়া, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, এমন কি বাচ্ছার মৃত্যুও হতে পারে। তাছাড়া সীসা দূষণের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যার পাশাপাশি নানান শারীরিক ও মানসিক সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
দৈনিক ব্যবহার্য অনেক জিনিসপত্র যেমন- রং, হলুদ, মরিচ, অ্যালুমিনিয়াম ও সিরামিকের থালা-বাসন, খাবারের পাত্র, বাচ্চাদের খেলনা, আয়ুর্বেদিক ঔষধ, সুরমা, সিঁদুর, প্রসাধনী ইত্যাদিতে সীসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়া সীসা যুক্ত এসিড ব্যাটারির অপরিকল্পিত পুনঃচক্রায়ন কারখানার মাধ্যমেও সীসা আমাদের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সীসা দূষণের প্রকোপ সাথে সাথে দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় এর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা এখনো উদাসীন।